মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় প্যারা-প্রফেশনালদের দক্ষতা বাড়ছে

বাংলাদেশে প্যারা-প্রফেশনালরা সীমিত জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করলেও, প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ঘটছে। তারা সেবাগ্রহীতাদের মন খুলে কথা বলা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। ফলে সেবাগ্রহীতারা মানসিকভাবে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুফল বয়ে আনছে।

রবিবার (২২ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠানে তাদের গবেষণালব্ধ ফল থেকে এসব তথ্য জানান।

বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, স্বনামধন্য বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিআইইডি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ও ইনফ্যান্ট, চাইল্ড, অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রিস্ট, অস্ট্রেলিয়া পরিচালিত ‘ইমপ্যাক্ট স্টাডি অন প্যারাকাউন্সেলর মডেল ইন্টিগ্রেটেড ইন প্রাইমারি হেলথ কেয়ার’ শীর্ষক একটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম কামরুজ্জামান মজুমদার ‘মানসিক স্বাস্থ্য পাইলট প্রকল্পের প্রক্রিয়া মূল্যায়ন’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণা পরিচালনা করে।

উল্লেখ্য, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্যব্যাধির হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, সম্প্রতি যার প্রাদুর্ভাব ১৮.৭ শতাংশ এবং এদের মধ্যে প্রায় ৯২.৪ শতাংশই চিকিৎসাসেবার বাইরে।

জাতিসংঘের ২০২২ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে ১৩ শতাংশ ব্যক্তি এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এটি বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রফেসর ড. এম কামরুজ্জামান মজুমদার প্রকল্পের প্রক্রিয়া মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে প্যারা-প্রফেশনালদের জন্য তৈরি করা প্রশিক্ষণ মডিউলটির কার্যকারিতা তুলে ধরেন। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে প্যারা-প্রফেশনালদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস তৈরিতে হাতে ধরে শেখানো, তত্ত্বাবধান, এবং নিজের যত্ন বিষয়ে তাৎপর্যের উল্লেখ করেন।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ওপর জোর দেন প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ড. রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি সেবাগ্রহীতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত সফল প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তী ধাপে এর পরিসর আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য পরিসেবা শুধু সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণিই নয়, বরং প্যারা-প্রফেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবার জন্য এটি নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এই প্রকল্পকে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সরকারের সহায়তা ও কার্যক্রম পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কখনও কখনও পদক্ষেপগুলো ভালোর চেয়ে বরং ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার বলেন, শুধু শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কার দূর করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোনও স্বাস্থ্যই টেকসই নয়। সরকার এবং এনজিওগুলির মধ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে সাধারণের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।