মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, পরের কর্মসূচি থেকে সহিংসতার আশঙ্কা

আগামী ২৮ অক্টোবর (শনিবার) অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলে আশা করছে বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। সেদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকায় পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে সরকারের তরফেও প্রচেষ্টা রয়েছে বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা। তবে, মহাসমাবেশ থেকে আসা নতুন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে মঞ্চের নেতারা তারেক রহমানের বর্তমান নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রবকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বৈঠকে ছিলেন।

বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতেই শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের বৃহত্তম জনপ্রিয় দল বিএনপির জননন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে আপনি নেতৃত্ব প্রদান করে যাচ্ছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, জীবন-মৃত্যু উপেক্ষা করে  রাজপথে নিরন্তর লড়াই সংগ্রামে বিএনপি অন্যতম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে মঞ্চের সমন্বয়ক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, “আমরা গণতন্ত্র মঞ্চও ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় যুগপৎভাবে রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পাদন করে যাচ্ছি। এখন আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। আমাদের এই সংগ্রাম  কঠিনতর সংগ্রাম। কারণ আওয়ামী লীগ দলটিই ‘স্টেইটে’ রূপান্তর হয়েছে। রাজনৈতিক দল,সরকার এবং রাষ্ট্র একাকার। ফলে একটি সশস্ত্র সংঘটিত শক্তি এবং বৃহৎ ও পরাশক্তির উপর নির্ভর একটি শক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণের লড়াই।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘২৮ তারিখের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের কৌশল, আমাদের শক্তি, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কৌশল নির্ধারণ আজ আলোচনা শুরু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

বৈঠকসূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলটির ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করা হয়। একইসঙ্গে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যত নেতৃত্বও তাদের ভিশন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে, বলে স্মরণ করা হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব পরিষ্কার করে বার্তা দিয়েছেন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। সেখানে বসে পড়ার কোনও নির্দেশনা নেই। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সময়ে দেশের বাইরে থাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও ইঙ্গিত দিয়েছেন, পরিস্থিতি ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ হবে।

বৈঠকে মহাসমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিএনপি আজ রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করবে এবং আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ও স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলবে। তবে কোনও সিদ্ধান্তই বাইরে আনা হবে না। সেক্ষেত্রে মহাসমাবেশের আগের রাতে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হবে যুগপতের বিশ্বস্ত সঙ্গীদের।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় ৫৫ মিনিটের বৈঠকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশের বিষয়ে কথা হয়েছে। মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। সমস্ত উসকানি মোকাবিলা করে স্মরণকালের মহাসমাবেশ হবে আশা করি। সরকার যেন পদত্যাগে বাধ্য হয়, মানুষের স্রোত সেই বার্তা দেবে। সর্বোপরি শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ হবে।’

নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সাইফুল হকের মন্তব্য, ‘আন্দোলনের সকল ফর্ম ব্যবহার করা হবে।’

মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার বার্তা সোমবার বিকালে আবারও দেন বিএনপির মহাসচিব। গুলশানে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে তিনি বলেন, ‘সরকার পতনের সমাধান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আসবে।’ গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি তিনি পুনরুল্লেখ করেন।

রাতের বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা উল্লেখ করেছেন, মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও থাকবে। তফসিলের আগে-পরে কর্মসূচি থাকবে। একেবারে টানা কর্মসূচির বদলে এক-দুদিন পর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সারাদেশকেন্দ্রিক অবরোধ, ধর্মঘটসহ নানা ধরনের কার্যকর প্রোগ্রাম ডাকার বিষয়ে কথা এখনও চলছে।

বৈঠকসূত্র দাবি করেছে, মহাসমাবেশ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার সবপক্ষীয় প্রচেষ্টা থাকলেও পরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হতে পারে। ঘেরাও, অবরোধ বা ধর্মঘটের ক্ষেত্রে ‘ক্যাজুয়ালিটি’ হতে পারে বলেও বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে বিএনপির শীর্ষনেতাদের কেউ-কেউ গ্রেফতার হতে পারেন। এছাড়া দলের সাংগঠনিক নেতাদের অনেকে গ্রেফতার হতে পারেন। এক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের তালিকা তৈরি করে রাখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরের পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, গত ৬ দিনে অর্ধশতাধিক মামলায় অন্তত ১২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি এবং ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঞ্চের একজন নেতা বলেন, ‘কর্মসূচি চূড়ান্ত করার আগেই সরকারের কাছে তথ্য চলে যাবে, সে কারণে একেবারে শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা হবে। বিএনপি নিজেরাও আলাপ করবে। এরপর বলা যাবে মহাসমাবেশ থেকে কী আসবে।’