জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী হলেন কেমন করে?‌ রাজনৈতিক উত্থানের রইল ঘটনাপ্রবাহ

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গতকাল বলেছিলেন, তল্লাশি অনেক হয়েছে। এবার গ্রেফতার করতে হবে। ঠিক তার পরই মাঝরাতে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু এখন রাজ্যের মানুষের প্রশ্ন হল, কে এই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক?‌ কেমন করে রাজনীতিতে প্রবেশ?‌ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন কেমন করে?‌ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খাদ্যমন্ত্রী হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এখন অবশ্য তিনি রাজ্যের বনমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে তাঁকে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্য–রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

আজ, শুক্রবার কলকাতার রেড রোডে দুর্গাপুজো কার্নিভাল আছে। ঠিক তার আগে এমন গ্রেফতার বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বরাবরই এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। সেটা রাজনীতিতে আসার আগেই। এলাকার পুজো, অনুষ্ঠান–সহ নানা সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। তাছাড়া কিছু সামাজিক কাজও করতেন এলাকার বালু। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে এলাকায় বালু বলেই সবাই চেনে। হাবড়া এলাকায় অনেক কাজকর্ম করতেন তিনি। ২০১১ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে হাবড়া আসন থেকে নির্বাচিত বিধায়ক হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তারপর পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের মন্ত্রী এবং পরে বনমন্ত্রী। আজ ইডির হাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

এদিকে হাবড়া, অশোকনগর–সহ ওই এলাকায় ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বালু ওরফে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখান থেকেই জনপ্রিয় হয়ে কংগ্রেস করতে শুরু করেন। কংগ্রেস করার সময় পরিচয় হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কংগ্রেসের বহু আন্দোলনের সাক্ষী এই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু যে মুহূর্তে কংগ্রেস ছাড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন তখন সেখানে যুক্ত হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর সাহসিকতা দেখে পছন্দ হয় তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর। জেলায় সংগঠন তৈরি করা থেকে শুরু করে ভোটের সময় সিপিএমের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এমনকী প্রত্যেকটি ২১ জুলাইয়ে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ব্যাপক ভিড় জ্যোতিপ্রিয়র উদ্যোগেই হতো।

আরও পড়ুন:‌ রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো, আকাশছোঁয়া বাজারদরে নাভিশ্বাস আমজনতার

অন্যদিকে এই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আবার মুকুল রায়ের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায়ের কাছাকাছি পৌঁছতেই আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি জ্যোতিপ্রিয়কে। তবে একা হাতে অনেক কাজ করতে পারেন জ্যোতিপ্রিয়। জনসংযোগ থেকে দফতর চালানো—সবই করতেন খুব দক্ষতার সঙ্গেই। ক্ষমতায় আসার পর ভেঙে পড়া খাদ্য দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। আজ যে লাভজনক খাদ্য দফতর দেখা যাচ্ছে সেটা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরেই গড়ে ওঠে। এমনকী দুয়ারে রেশন কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে ভরসা রাখতে হয়েছিল তাঁর উপরই। পরে অবশ্য তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় বন দফতরে। কারণ খাদ্য দফতরের নানা কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। যদিও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‌গভীর ষড়যন্ত্র করে আমাকে গ্রেফতার করা হল। এই আমি বলে গেলাম। শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি ষড়যন্ত্র করেছে।’‌