ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের ভেতরে হামাস যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মানবিক সংকটের কারণে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের পর মঙ্গলবার এই হামলার কথা জানালো দেশটির সেনাবাহিনী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বড় বাধা হামাসের তৈরিকৃত এই সুড়ঙ্গ। এগুলো গাজা শহরজুড়ে বিস্তৃত। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে রক্ষা পেতে হামাস এসব সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের নিহতের পর গোষ্ঠীটি নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। হামলার দিন ইসরায়েল থেকে দুই শতাধিক জিম্মিকে গাজায় নিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। তাদেরকে সুড়ঙ্গে রাখা হয়েছে বলে ইসরায়েল ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছেন, গত দিনে প্রায় ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট উৎক্ষেপণ স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, হামাস যোদ্ধারা ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও মেশিনগান থেকে গুলি ছোড়েছে। সেনারা সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছে এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে বিমান হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সোমবার দিবাগত রাতে আকাশ, সাগর ও স্থলপথে বোমা বর্ষণ করেছে। গাজার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এসব বোমা হামলা করা হয়। এখানে ইসরায়েলি সেনারা স্থল অভিযান পরিচালনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্থল অভিযান পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলোর আশঙ্কা এতে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে বৃহত্তর সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের লোহিত সাগরীয় শহর এইলাতে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজানো হয়েছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আকাশপথে আসা একটি বস্তুকে ভূপাতিত করেছে। বেসামরিকদের কোনও হুমকি বা ঝুঁকি নেই।
এর আগে সোমবার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার দক্ষিণ-উত্তরের প্রধান সড়ককে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। একই সঙ্গে দুই দিক থেকে গাজা শহর অভিমুখে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা বলেছে, তাদের অভিযানে হামাসের হাতে বন্দি থাকা এক নারী সেনা সদস্যকে মুক্ত করা হয়েছে।
হামাসের হাতে বন্দি থাকা ২৪০ জনের মধ্যে চার জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেড বলেছে, মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে তাদের যোদ্ধারা। ১০৫টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে চারটি গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
তারা আরও বলেছে, উত্তরপশ্চিম গাজায় ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার লক্ষ্য করেও হামাস যোদ্ধারা হামলা চালিয়েছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে স্বাধীনভাবে লড়াইয়ের খবর নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০৬ জনে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫৭ জন। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ জনসংখ্যা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ অপর দেশগুলোর পক্ষ থেকে উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার নেতানিয়াহু বলেছেন, হামলা বন্ধ করবে না ইসরায়েল এবং হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির আহ্বান হলো হামাসের কাছে, সন্ত্রাসবাদের কাছে, বর্বরতার কাছে ইসরায়েলের আত্মসমর্পণের আহ্বান। এমনটি ঘটবে না।