যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোমগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযান

যুক্তরাজ্যের বি‌ভিন্ন এলাকায় কেয়ার হোমগু‌লো‌তে অভিযান শুরু ক‌রে‌ছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্মীদের দৈ‌নিক হা‌জিরা রেজিস্টার থে‌কে শুরু ক‌রে পে স্লিপ সব‌কিছু একে একে খতিয়ে দেখছে তারা। অনুপস্থিত কর্মীরা ছুটিতে আছেন দেখা‌নো হ‌লে পরবর্তী তা‌রি‌খে তা‌দের কর্মস্থ‌লে হা‌জির রাখ‌তে বলা হ‌চ্ছে। অনিয়‌মের অভিযোগে চল‌তি সপ্তাহে নতুন ক‌রে আরও বেশ কয়েকটি কেয়ার হোমের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে।

প্রায় দেড় বছর ধরে কেয়ার ভিসার না‌মে বেশিরভাগ কেয়ার হোমগু‌লোর বিরুদ্ধে মানবপাচা‌রের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। কিন্তু চল‌তি সপ্তাহে আসা কর্মীদের সঙ্গে কেয়ার হোমগু‌লোর অমান‌বিক বিভিন্ন আচরণ ও কর্মকাণ্ড নি‌য়ে ব্রিটে‌নের স্কাই নিউজসহ বিভিন্ন মি‌ডিয়ায় খবর প্রচা‌রের পর মা‌ঠে নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা অভিযানে গি‌য়ে দেখ‌তে পান যে-সব কেয়ার হো‌মের দশজন মানুষ দরকার, তারা ত্রিশজন কর্মী এনেছে। সং‌শ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভিসায় আসা কর্মীরা কোথায় আছেন তা কর্তৃপক্ষ জানে না, এমন ঘটনাও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। কেয়ার হো‌মের প‌ক্ষে স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার আবেদনে সম্পৃক্ত আইনজীবী কেয়ার হোমকে না জা‌নি‌য়ে লগইন ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার ক‌রে ভিসার আবেদন করার ঘটনাও ঘটেছে।

লন্ডনের লেক্সপার্ট সলিসিটর্স এলএলপি’র ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার শুভাগত দে বাংলা ট্রিবিউনকে ব‌লেন, কেয়ার হোমের লাই‌সেন্স বাতি‌লের পর ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত এখন আমাদের কা‌ছে আসছেন।

এই সেক্টরে ব্যাপক অনিয়মের খবর প্রকাশের পর আগামী দিনগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরেজমিন অনুসন্ধান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

গত বছর ৭৭ হাজার ৭০০ জন‌কে কেয়ার ভিসা দি‌য়ে‌ছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকার ২০২১ সালে প্রবীণদের পরিচর্যা কর্মীদের ‘শ‌র্টেজ অকু‌পেশন’ তালিকায় যুক্ত করে। মূলত ব্রেক্সিটের পর থেকে ক্রমবর্ধমান শূন্যপদ পূরণের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছর কেবল ভারত থে‌কে ত্রিশ হাজার, নাই‌জে‌রিয়া থে‌কে ১৮ হাজার ও জিম্বাবু‌য়ে থেকেই ১৭ হাজার কর্মী কেয়ার ভিসায় ব্রিটে‌নে এসেছেন। চল‌তি বছ‌রের মার্চ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৬৯৩ জন‌কে কেয়ার ভিসা ইস্যু ক‌রা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটে‌নে বাংলাদেশিসহ বি‌ভিন্ন অভিবাসী ক‌মিউনিটি‌তে কেয়ার ভিসা নি‌য়ে হাজার হাজার পাউন্ডের বা‌ণিজ্য ও কর্মীদের এনে কেয়ার হোমগু‌লোর বিরু‌দ্ধে কাজ না দি‌তে পারার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে কেয়ার হোমগু‌লো বল‌ছে, যারা বাংলা‌দেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে আস‌ছেন তা‌দের কা‌জের ও ভাষাগত ন্যূনতম দক্ষতা না থাকায় কাজ দি‌তে পার‌ছেন না তারা।

মাইগ্রেন্টস রাইটস নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী ফিজা কুরেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, অনেক অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগকর্তাদের কৌশ‌লের কাছে আটকে আছেন। কেয়ার কর্মীদের প্রতি খারাপ ব্যবহার ও অনেক ক্ষে‌ত্রে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে।

ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের সিনিয়র পলিসি কর্মকর্তা আদিস সেইক বলেন, কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় স্পন্সরদের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।