Horrific Train Experience: লাগে ৪৩ ঘণ্টা, ৯০ ঘণ্টা পরও ট্রেন এল না কলকাতায়, ‘যেন দয়া করছে’, তিতিবিরক্ত সকলে

সাড়ে চার বছরের ছেলের ১০২ ডিগ্রি জ্বর, পাশের কামরার এক বৃদ্ধ প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, নিজেদের কামরার দেড় বছরের খুদের অবস্থাও খারাপ- গত ৯০ ঘণ্টায় মামুলি একটা ট্রেনযাত্রা এরকমই বিভাষিকী হয়ে উঠেছে কলকাতার বাসিন্দা প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের কাছে। কারণ তাঁরা যে ট্রেনে আছেন, সোমবার বেলা ১২ টা নাগাদ শালিমারে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সেটি এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় প্রবেশ করেনি। কখন শালিমারে পৌঁছাবে, সেটাও জানেন না। যত সময় যাচ্ছে, তত রেলের প্রতি রাগ-ক্ষোভ বাড়ছে। আর সেই রান-ক্ষোভ থেকেই প্রতীক কটাক্ষ করেছেন, যেভাবে ট্রেন যাচ্ছে, তাতে ২২৬৪১ ত্রিবান্দ্রম সেন্ট্রাল-শালিমার এক্সপ্রেস গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।

অথচ গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) যখন ত্রিবান্দ্রম সেন্ট্রাল থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন, তখন সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। নির্ধারিত সূচি মেনে বিকেল ৪ টে ৫৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়েছিল। সোমবার সকাল ১১ টা ৫৫ মিনিটে শালিমারে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু রবিবার রাত আটটা নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের নারসিপট্টম নামে একটি জায়গায় আচমকা ট্রেন থমকে যায় বলে জানিয়েছেন প্রতীক। যিনি স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে বি৪ কোচে (এসি থ্রি’টিয়ার) আছেন।

আরও পড়ুন: Andhra Pradesh Train accident update: রেড সিগন্যাল না দেখে এগিয়েছে ট্রেন, রেল কর্মীর গাফিলতি! অন্ধ্রের ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ কী?

তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সকলে ভেবেছিলেন যে সিগন্যাল পায়নি বলে ট্রেন দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু যত সময় গড়াতে থাকে, তত বিষয়টা স্পষ্ট হতে থাকে। রাত ১২টা নাগাদ জানানো হয় যে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজিয়ানগরমে দুই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংঘর্ষের কারণে তাঁদের ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। বিজয়ওয়াড়া-নাগপুর দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের পিছন দিকে যেতে শুরু করে ট্রেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় ভোগান্তি। যা ক্রমশ অত্যাচারে পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন প্রতীক।

ওই যাত্রী জানান, যেখানে-সেখানে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতে থাকে। সব ট্রেনকে আগে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তাঁদের ট্রেন লেট বলে আরও দেরি করছে রেল। এমন-এমন জায়গায় দাঁড়াচ্ছে যে ট্রেনে ডাকাতি হলেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘এমন মনে হচ্ছে যে আমাদের ট্রেনের উপর দয়া করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। লোকাল ট্রেন, মালগাড়ির সিগন্যালও আগে দিয়ে দিচ্ছে। একেবারে থার্ড ক্লাস কোনও লাইনে আমাদের ট্রেন ঢুকিয়ে দিয়েছে। একেবারে দয়া হলে আমাদের সিগন্যাল দিচ্ছে। জঙ্গলে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ছে। এভাবেই দিন কাটছে।’ 

সেই পরিস্থিতিতে ট্রেনের যাত্রীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন প্রতীক। তিনি জানিয়েছেন, ট্রেনে যখন উঠেছিলেন, তখন ছেলে পুরোপুরি সুস্থ ছিল। কিন্তু টানা এসিতে থেকে সোমবার থেকে ছেলের জ্বর এসে গিয়েছে। কোনওভাবেই কমছে না জ্বর। ট্রেনে কোনও ডাক্তার না থাকায় হাতের কাছে যা ওষুধ আছে, তাই খাওয়াতে হচ্ছে। ‘পাশের কামরায় রাইলস টিউব লাগানো এক বৃদ্ধ প্রায় ফেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম যে মারা গিয়েছেন।’

আরও পড়ুন: Andhra Train Accident: শুধু কান্নার শব্দ! অন্ধ্রে অভিশপ্ত ট্রেন থেকে ১৫জনকে বাঁচিয়ে ‘রিয়েল হিরো’ প্রাক্তন সেনা জওয়ান

তবে সেইসবের মধ্যে একটাই রেহাই যে প্যান্ট্রিকারে খাবার মিলছে। এসি চলছে।সেটা অবশ্য কতক্ষণ মিলবে, তা জানেন না প্রতীকদের মতো বাকি যাত্রীরাও। তাঁদের বক্তব্য, রেল তাঁদের পুরো খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে। কোনও খবর দেওয়া হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় রেল মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কবে শালিমারে ট্রেন পৌঁছাবে, সেটাও রেলের তরফে ন্যূনতম কিছু জানানো হচ্ছে না।

প্রতীক বলেন, ‘প্রথমে বলা হয়েছিল যে মঙ্গলবার ঢুকে যাব আমরা। কিন্তু সেটা তো হল না। বুধবার প্রায় ১১টা বাজতে যায়। এখনও আমরা বহুদূরে আছি। ঝাড়গ্রাম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলায় কখন ঢুকতে পারব, জানি না। কখন এই ভোগান্তির শেষ হবে, সেটাও জানি না।’

রেলের প্রতিক্রিয়া

বিষয়টি নিয়ে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র তরফে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্যকুমার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। কেন ট্রেন লেট করছে, সেটা রেলের অফিস থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।