ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষার কোনও অধিকার নেই: রাশিয়া

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার কোনও অধিকার নেই। বুধবার (১ নভেম্বর) তিনি ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় সমর্থন দেওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ‘ভণ্ডামি’র তীব্র সমালোচনা করেছেন। রুশ বার্তা সংস্থা তাস এ খবর জানিয়েছে।

ফিলিস্তিন নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেবেনজিয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের ভণ্ডামির কথা তুলে না ধরে পারছি না। যারা অন্য কোনও ভিন্ন পরিস্থিতি হলে মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানাতো, তদন্ত কমিশন গঠন করত, যারা দীর্ঘ কয়েক বছরের সহিংসতায় শক্তি প্রয়োগ করছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করত।

নেবেনজিয়া বলেছেন,আজ গাজায় যে কোনও আঞ্চলিক সংঘাতের চেয়ে বহুগুণ বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটছে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলা হচ্ছে, হাজারো শিশু নিহত হচ্ছে, সর্বাত্মক অবরোধে ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে বেসামরিকরা। এসব ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষের পর তারা নীরব। তারা শুধু ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষার অধিকার  নিয়ে কথা বলছে। যে দেশটি একটি দখলদার রাষ্ট্র। যে দেশটির এমন অধিকার নেই। ২০০৪ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে)-এর এক রুলিংয়ে ইসরায়েলকে দখলদার শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যার দখলকৃত জেরুজালেমকে বিভক্ত করতে দেয়াল তৈরির অধিকার নেই। তবে চিরাচরিতভাবে তেল আবিব এই রুলিং উপেক্ষা করে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংস্থা, যেমন- ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস, দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুক্তি তুলে ধরে বলে আসছে ১৯৬৭ সাল থেকে গাজাসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে দেশটি।

বক্তব্যে রুশ দূত বলেছেন, মস্কো ইসরায়েলের নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকারকে সমর্থন করে। কিন্তু এই অধিকার স্বীকার করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধানের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ ও রক্তপাত বন্ধ এবং পুরো অঞ্চলে সংকটের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন রুশ দূত। তিনি বলেছেন, আজ বা কাল এই পথে হাঁটতে হবে, কিন্তু একমাত্র প্রশ্ন হলো এর মধ্যে কতজন নিরপরাধ মানুষকে মরতে হবে।

৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নির্মূল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৬৪৮ শিশু ও ২২৯০ নারীসহ নয় সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি বোমা নিয়মিত হাসপাতাল, মানবিক আশ্রয়কেন্দ্র, আবাসিক ভবন, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্স এবং বেসামরিক বহরে আঘাত করছে। যদিও ইসরায়েল ও দেশটির পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা দাবি করে চলেছে, সেনাবাহিনী বেসামরিক হতাহত ‘সীমিত’ করার চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলেছে, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে চলতি সপ্তাহের হামলা ‘যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে’।