সন্দীপ সরকার, কলকাতা: লকডাউনে তখন ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্ব তখন ঘরবন্দি। কিন্তু বল হাতে না নিলে যে তাঁর রাতে ঘুমই আসবে না! অবিলম্বে ক্রিকেট প্রস্তুতি শুরু করা দরকার।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। উত্তরপ্রদেশের আমরোহা গ্রামে নিজের ফার্মহাউস সংলগ্ন জমিতেই নেট প্র্যাক্টিসের বন্দোবস্ত করে ফেললেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে কখনও একান্তে, শুধু স্টাম্প পুঁতে, কখনও আবার ২-৩ জন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে প্র্যাক্টিস করতেন ডানহাতি পেসার। আর থাকতেন একজন। বদরউদ্দিন আমেদ। শামির ব্যক্তিগত কোচ। কীভাবে বদলে গেলেন শামি, হয়ে উঠলেন আরও বিপজ্জনক এক পেসার, এবিপি আনন্দকে সেই গল্প শোনালেন বদরউদ্দিন।
আমরোহা থেকে মোবাইল ফোনে শামির ব্যক্তিগত কোচ বলছিলেন, ‘লকডাউনে অনেকের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছিল। অনেক ক্রিকেটারও প্রস্তুতির সুযোগ হারিয়েছিল সেই সময়। অথচ শামির নুত করে স্বপ্ন দেখার সেই শুরু। ওই সময় ফার্মহাউসে নেট প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা করে যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিল ও। নিজেকে নিমজ্জিত রেখেছিল কঠোর সাধনায়। তারই পুরস্কার পাচ্ছে এখন।’
চলতি বিশ্বকাপে (ODI World Cup) শামির বোলিংয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ শিবিরে। ৩ ম্য়াচে ১৪ উইকেট। বিশ্বকাপে সর্বকালীন রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন। জাভাগাল শ্রীনাথ ও জ়াহির খানের রেকর্ড ভেঙে শামিই এখন বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৪৫) নেওয়া ভারতীয় বোলার। স্যুইং তো আছেই, সবচেয়ে বেশি নজর কেড়ে নিচ্ছে শামির সিম পোজিশন। সোজা সিমে বল করেন বরাবরই। তা যেন আরও নিখুঁত হয়েছে। ফলে পিচে পড়ে বল নড়াচড়া করছে। ব্যাটারদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
কীভাবে এত ধারাল হয়ে উঠলেন বোলার শামি? বদরউদ্দিন শোনালেন সেই কাহিনি। বললেন, ‘ও যখন আমার কাছে প্রথম এসেছিল, সিম কাকে বলে জানতই না। আমি ওকে শেখাই কীভাবে সিমের ব্যবহার করতে হয়। তবে ওর শেখার ইচ্ছে আর জেদ প্রবল। একবার একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকে গেলে আর ভোলে না। সেই থেকেই সিমের ব্যবহারে ও পটু।’ যোগ করলেন, ‘তবে আগে সিম ব্যবহার করলেও, মাঝে মধ্যে এলোমেলো বোলিংও করে ফেলত। সেটাই বদলে ফেলেছে বিশেষ এক প্রস্তুতিতে।’
কী সেই প্রস্তুতি? শামির ব্যক্তিগত কোচ বললেন, ‘পুরো রান আপ নিয়ে নয়, ও রোজ দুটি মাত্র স্টেপ নিয়ে বল করা প্র্যাক্টিস করে। নজর রাখে যাতে সোজা সিমে ও সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারে। টানা কিছুক্ষণ এভাবে বল করার পর রান আপ বাড়িয়ে বল করে। ওই দু কদম ফেলে বোলিংয়ের জন্যই ও আরও ভয়ঙ্কর, নিশানায় অভ্রান্ত ও সিমের ব্যবহারে নিখুঁত হয়ে উঠেছে। সঙ্গে ওর অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। জানে কখন কীভাবে বল করতে হয়। সব মিলিয়ে এটা নতুন শামি।’
বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্য়াচে শামিকে সুযোগ না পেতে দেখে খারাপ লেগেছিল? ভারতীয় পেসারের বোলিং গুরু বলছেন, ‘একাদশের বাইরে বসে থাকতে কার আর ভাল লাগে। আমি অবাকই হয়েছিলাম। ওর সঙ্গে যখনই কথা হতো, বুঝতে পারতাম মাঠে নামলে ব্যাটারদের জন্য কী অপেক্ষা করে রয়েছে। ভেতর ভেতর ফুটছিল। ও ঠিকই করে নিয়েছিল, সুযোগ পেলে এমন পারফর্ম করবে যে, কেউ বাদ দেওয়ার কথা ভাববেই না। ঠিক তাই হয়েছে।’
বিশ্বকাপে শামির বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব কী দেখছেন? বদরউদ্দিন বললেন, ‘ও স্যুইংটা করায় স্টাম্পে বল ফেলে। আউটস্যুইং হোক বা ইনস্যুইং, বল উইকেটের মধ্যেই নড়াচড়া করে। ব্যাটারকে খেলতে বাধ্য করছে। তাই উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে।’
বল হাতে তিনি কী করতে পারেন, দেখছে গোটা বিশ্ব। এবার অপেক্ষা ইডেন গার্ডেন্সের। বল হাতে ঘরের ছেলের দৌরাত্ম্য দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন: ODI World Cup Exclusive: বিমানবন্দর থেকেই সোজা ইডেনের পিচ দেখতে হাজির গুরু দ্রাবিড়, নিয়ে গেলেন খুশির বার্তা
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial