আগামী সপ্তাহে নতুন ধরনের কর্মসূচিতে ফিরছে বিএনপি!

সরকার চাইছে বিএনপিকে ঘরে তুলে রেখে নির্বাচনি পরিক্রমা পার করতে, এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে নতুন করে সরকার পতনের কর্মসূচি প্রণয়নের চিন্তাভাবনা চলছে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোতে। একদফা দাবিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার অবরোধ শেষে নতুন করে বুধবার ও বৃহস্পতিবার (৮ ও ৯ নভেম্বর) অবরোধ ডেকেছে এই দলগুলো।

দ্বিতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সোমবার (৬ নভেম্বর) বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—তুলনামূলক আজকের (সোমবার) অবরোধ কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে হয়েছে। কাজের তাড়নায় মানুষ কাজে যোগ দিয়েছে, রাস্তায় ছিল অন্যদিনের তুলনায় বেশি যানবাহন। একাধারে অবরোধ চলায় ঢাকায় পণ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ব্যাপক, এ বিষয়টিকেও আমলে নিয়েছেন নেতারা।

নেতাদের দাবি, ক্ষমতাসীনরা চাইছে বিএনপিকে ঘরে তুলে রাখতে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। নেতারা বলছেন, তারা ইতোমধ্যে বিশ্লেষণ করেছেন, বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচি আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরকার কন্ট্রোলে নেবে। যেভাবে পুলিশ মামলা দিয়ে, নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি করে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে, তাতে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ‘কন্ট্রোলে’ নেবে তারা।

বিরোধী দলের একাধিক প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অবরোধের মধ্যে টানা থাকলে জনমনে অসন্তোষ হতে পারে। যদিও এই ‘সাময়িক অসুবিধা রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে’, বলে শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। এ কারণে চলতি সপ্তাহেও অবরোধ থাকবে। তবে আগামী সপ্তাহের কর্মসূচিতে ভিন্নতা আসতে পারে।’ এ বিষয়টিতে সায় পাওয়া গেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বক্তব্যেও।

রবিবার (৫ নভেম্বর) পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য—দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, জহির উদ্দিন স্বপনসহ ২৬১ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা রয়েছে বিএনপিতে। একই বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চও প্রকাশ্য কর্মসূচি দিতে পারে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষে শায়রুল কবির খান জানান, ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মোট ২৬১ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার, ৯টির মামলায় ১০৬০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে (এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাত) আসামি করা হয়েছে।

শায়রুল কবির জানান, চলতি বছরের ২৮ ও ২৯ জুলাই  থেকে এ পর্যন্ত (৬ নভেম্বর) বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে—মোট গ্রেফতার ৭ হাজার ৯৭৪ জন, মোট মামলা ৫১৫টির বেশি, মোট আসামি ৩৯ হাজার ৬২০ জন, মোট আহত নেতাকর্মী ৫ হাজার ৭৯১ জনের বেশি, মোট মৃত্যু ১০ জন (সাংবাদিক ১ জন)। মিথ্যা মামলায় সাজা— মোট মামলা ১৭টি, ৯ জনের মৃত্যুণ্ডাদেশ ও প্রায় ১১১ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শায়রুল কবির খান।

দলের উচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীলের ভাষ্য—বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এখন খাঁচায় ছটফট করছে। চলমান কর্মসূচির বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। দলের কোনও কর্মী ও নেতা বাসায় ঘুমাতে পারেন না, এমনকি গ্রামেও। বিরোধীদের সামনে আপাতত বিকল্প নেই। এ কারণে নেতাকর্মীরা সারা দেশে তৎপর। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পিকেটিং হচ্ছে।

প্রভাবশালী এই দায়িত্বশীলের দাবি—বিরোধীদের সামনে কেবল দুটি পথ। একটি সরকার তৈরি করে দিলে বা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মধ্যস্থতার মধ্য দিয়ে। কারণ, বিএনপি বিগত পাচ বছর ধরে ‘রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে শান্তিপূর্ণ’ শব্দটিকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবহার করেছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ সফল হলে সরকারের কী ক্ষতি হতো, এখন পণ্ড করে কী লাভ হয়েছে? বলে ব্যাখ্যা করেন এই দায়িত্বশীল। তার ভাষ্য, ওই মহাসমাবেশ করা ছাড়া বিএনপির সামনে কোনও বিকল্প ছিল না।

সোমবার (৬ নভেম্বর) জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘প্রমাণিত হয়েছে এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা আছি অবরোধে, ওরা আছে আগুনসন্ত্রাসে। আমাদের নেতাকর্মীদের পরিষ্কারভাবে বলা আছে— গাড়িঘোড়ায় আগুন দেওয়া যাবে না। সরকার দিচ্ছে আগুন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। তারা আগুন দিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়।’

‘এবার আমরা সাংঘাতিক সতর্ক’ উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রাম শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে।’

দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের মুক্তির দাবিতে নতুন ধরনের প্রোগ্রাম আসবে বলে জানান ইকবাল হাসান। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারের প্রতিবাদে কর্মসূচি আসবে। নতুন ধরনের প্রোগ্রাম আসবে।’

দলের দায়িত্বশীল এই নেতা উল্লেখ করেন, বিরোধীদের চলমান আন্দোলন ও সরকারের দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকলে সমাধানের পথ বের করা কঠিন। এক্ষেত্রে বিশ্বজনমত মধ্যস্থতার কাজে আসতে পারে। তার দাবি, ‘বিএনপির নেতৃত্ব বিশ্বাস করেন—গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই ভোটাধিকার ফিয়ে আসবে।’