রাজনৈতিক অস্থিরতায় অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতটা তৎপর পুলিশ?

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের ওপর বাড়তি চাপ বেড়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে নজরদারির পাশাপাশি রাজনীতিকদের বিভিন্ন তৎপরতার বিষয়টিও তদারকি করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করতে হচ্ছে কোনও কোনও রাজনীতিককে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় পুলিশের পক্ষে সাধারণ অপরাধ, যেমন- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। যদিও ডিএমপির কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও তারা সক্রিয় রয়েছেন। কোথাও কোনও ঘাটতি নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল-অবরোধের কারণে মাঠে স্থানীয় থানা পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের থাকতে হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানা এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি করতে হচ্ছে দায়িত্বরত এসআই ও এএসআইদের। আর এগুলো সরাসরি তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিরা।

পুলিশ সূত্র বলছে, সম্প্রতি রাজধানীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে নিয়মিত টহলসহ ছিনতাই ও ডাকাতি মতো ঘটনা প্রতিরোধে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর টানা তিন দিনের অবরোধের পর আবারও যুক্ত হয়েছে ৫ ও ৬ নভেম্বর দুই দিনের টানা অবরোধ কর্মসূচি। বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে মামলা। হরতাল-অবরোধ চলাকালে পোড়ানো হয়েছে গাড়ি, সড়কে ভাঙচুর হয়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। এমনকি আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

ডিএমপি সূত্র বলছে, হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে কেউ যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট থানার প্রতিটি সদস্যকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত ডিউটির বাইরেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি এসব বিষয় তদারকি করছে। কোথাও  নাশকতা কিংবা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে  জড়িতদের  আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানো যাচ্ছে না। এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা,  এমনকি ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদেরও ডিউটি বেড়েছে। সকালের শিফটের ডিউটি শেষ করে ফের নাইট ডিউটি করতে হচ্ছে অনেককেই।

আলাপকালে ডিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, হরতাল-অবরোধের মতো ঘটনা সামাল দেওয়ার পাশাপাশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, গ্রেফতার, ওয়ারেন্ট তামিলের বিষয়গুলো চলমান রয়েছে। তারা জানান, থানার প্রত্যেক সদস্যকে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ থাকতে হচ্ছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি সব বিষয়ে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, গত ২১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ও নাশকতার মামলায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ১৭২ জনকে। এ সময়ে নাশকতা ও সহিংসতার মামলা হয়েছে ৫০টির বেশি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ। আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও ক্রাইম প্রিভেনশন নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে থাকি। এতে আমাদের কোনও অসুবিধা হয় না।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স ড. খ. মহিদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোকে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য কিছুটা বেশি তৎপর থাকতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে এর মধ্যেও অপরাধীর অবস্থান শনাক্ত করা, ওয়ারেন্ট তামিল, চুরি ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা প্রতিরোধেও কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’