সাকিবের জন্য জানবাজি রেখে খেলবে বাংলাদেশ!

সাকিব আল হাসান মহাটেনশনে থাকতেই পারেন। কেন টেনশনে থাকবেন? এমন প্রশ্ন তো মনের মধ্যে আসতেই পারে। শনিবার পুনেতে দল খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর সাকিব তো চোট পেয়ে এখন বাসায় বিশ্রামে। তাহলে? মাঠে যখন খেলবেনই না, টেনশনটা কোথায়? টেনশনটা আসলে পুনের ম্যাচ ঘিরেই। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে থাকবে কি থাকবে না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এই ম্যাচের ফলের ওপর।

ভারতে শুরুতে বাংলাদেশ সেমিফাইনালের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ খেললেও আস্তে আস্তে তা ফিকে হতে শুরু করে। পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে যেতে যেতে এমনই অবস্থা যে, আচমকা ঘোষণায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতার মাপকাঠি পূরণ করতেই ওষ্ঠাগত অবস্থা।

যাই হোক। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ এক জয় ও অন্য ম্যাচগুলোর হিসাবনিকাশ দেখে এখন বাংলাদেশের ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা কিছুটা সহজ মনে হচ্ছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো শনিবার অজিদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারা চলবে না। তার ওপর নির্দিষ্ট রান রেটের ওপর ভর করে সেরা আটে থাকতে হবে। তাহলেই মিলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জিয়ন কাঠি।

তাই পুনেতে না থেকেও সাকিবকে নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। এর আরও একটি কারণও আছে। দেশ ছাড়ার আগে টি স্পোর্টসের কাছে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন সাকিব। এখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন তো দূরের কথা, সেরা আটে জায়গা ধরে রাখতে ‘যুদ্ধ’ করতে হচ্ছে। এই ‘যুদ্ধে’ জয়ী হতে পারলে মিলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মহামূলব্যান টিকিট।

আর টিকিট মিললে শুধু বাংলাদেশ দলই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে না, পাশাপাশি অধিনায়ক সাকিবও নির্ভার থাকতে পারবেন। অন্তত অবসরের জন্য অন্য কোনও সিরিজের আশ্রয় নিতে হবে না তাকে। তাই ঢাকায় বসে সাকিব মনেপ্রাণে নিশ্চয়ই দোয়া করবেন যেন দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ এক ফল করে। হারলেও যেন তা নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে থেকে, যেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট মিলতে সমস্যা না হয়।

হারতে হারতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তখনই লঙ্কানদের দারুণভাবে বধ করেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে সাকিব অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেছেন। পরে জানা গেছে তর্জনিতে ব্যথা কাউকে বুঝতে দেননি। দলের স্বার্থে খেলে গেছেন। খেলা শেষে পরে জানা গেছে, আপাতত আঙুলে চিড় ধরার কারণে শেষ ম্যাচ খেলা হবে না। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।

তবে ঢাকায় ফিরলেও সাকিব কিন্তু সতীর্থদের একদিক দিয়ে উজ্জীবিত করে এসেছেন। শান্তর সঙ্গে তার দারুণ জুটিতে লঙ্কানদের বধ করে ড্রেসিংরুমের গুমোট পরিবেশটা একটু হালকা হয়েছে। এখন সবাই অন্তত শেষ ম্যাচটাতে নিজেদের ‘লড়াকু পারফরম্যান্স’ দেখাতে তৈরি। সাকিব নিজেই লঙ্কান ম্যাচ শেষে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

যদিও পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এই মুহূর্তে কঠিন কিছু করে দেখানো সহজ হবে না। এক কার্ডিফের জয় ছাড়া তো তেমন সুখকর স্মৃতি নেই। তার ওপর যেভাবে আগের ম্যাচে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অতিদানবীয় ইনিংস খেলেছেন। তাতে করে তাদের শক্তির তারতম্য পরিষ্কার।

বাংলাদেশের মতো দল পেয়ে অস্ট্রেলিয়া কী করতে পারে তা হয়তো অনেকেই অনুমান করতে পারেন। কিন্তু কথার পিঠে কথা থাকে। সব দিন তো সবার জন্য সমান যায় না। চ্যাম্পিন্স ট্রফির জন্য খেলতে নামা বাংলাদেশ যদি হিসাবনিকাশ অনুযায়ী দিন শেষে সব ঠিকঠাক মতো করতে পারে তাহলে আপাত লক্ষ্য পূরণ হতেই পারে।

সাকিব বাসায় বসে নিশ্চয়ই ম্যাচ দেখবেন। সতীর্থদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করবেন। দেশের পাশাপাশি সেরা অলরাউন্ডারের জন্য হলেও শান্ত-মাহমুদউল্লাহরা জানবাজি রেখে খেলবেন, এটুকু তো বলা যায়ই!