জামায়াত নিয়ে বক্তব্য দিয়ে দলের মধ্যে চাপে টুকু, রিজভীর বিবৃতি

ভারতীয় ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’তে বুধবার (৭ নভেম্বর) দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্য তার একান্ত নিজস্ব বলে জানিয়েছে দলটি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতীয় একটি ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’তে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সেকুলারিজম, পলিটিক্যাল ইসলাম সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছে তা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কিত যে মতামত দিয়েছে, সেসব বক্তব্য এবং মতামত একান্তই তার নিজস্ব, এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’

রিজভী উল্লেখ করেন, ‘বিএনপি হলো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।’

বিএনপি নেতা রিজভী বিবৃতিতে বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মূলভিত্তি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। জনগণভিত্তিক গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সব ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নাম বিএনপি।’

সাক্ষাৎকারে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্যেও একই বিষয় উঠে আসে। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তা অস্বীকার করছেন।’

সাক্ষাৎকারে বলা হয়, ‘ইকবাল হাসান মাহমুদ যুক্তি দিয়েছিলেন, বিএনপি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, যারা ‘ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহারের’ বিরোধিতা করে। বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল।

‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক জোট যেভাবে হয়, ঠিক সেভাবে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল। সেটা এখন অতীত। প্রশ্নটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কেন তিনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেননি, তার জবাব দেওয়া উচিত।’ সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন মাহমুদ টুকু।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে একাধিক বিএনপি নেতা বলেছেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ বিএনপির বর্তমান পলিসির ভেতরে থেকেই বক্তব্য দিয়েছেন। আর জামায়াত প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি বাস্তব, সরকারই দলটিকে নিষিদ্ধ করছে না, সে বিষয়টি তিনি সামনে এনেছেন। জামায়াতের সঙ্গে ২০ দলীয় থাকার বিষয়টিও যে অতীত, সেটিও তিনি জানান। এ ক্ষেত্রে কেবল জামায়াতকে খুশি করতে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলে স্থায়ী কমিটি, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মনে করেন।

সম্প্রতি দ্য হিন্দুতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেন। 

আরও পড়ুন…

চাপে পড়েছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

জামায়াতের সঙ্গে কি আ. লীগের ‘পরকীয়া’ চলছে, প্রশ্ন টুকুর

‘এসবই জামায়াতের ফাইজলামি’, খন্দকার মোশাররফ ও দুদুর ক্ষোভ

বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যের

বিএনপি কি চীনকে পাশ কাটাচ্ছে?