জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারে গড়িমসি, সিন্ডিকেটে হয়নি সিদ্ধান্ত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন শেষে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। তবে এ ঘটনার প্রায় ৩ মাস পার হলেও বিচার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এছাড়া ডিসিপ্লিনারি বোর্ড থেকে নির্যাতনে অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করা হলেও সোমবার (১৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

জানা যায়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১২তম নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় আলোচ্যসূচিতে থাকা ৭০টি বিষয়ের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারের বিষয়টি ৪০ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এ বিষয়ে সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে আলোচনা করা হয়নি।

এর আগে, গত ২২ আগস্ট দিনগত রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের চলা গেস্টরুমের ভিডিও ধারণের সন্দেহে ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ জনকে মূল অভিযুক্ত এবং ৮ জনকে মদতদাতা উল্লেখ করে হল প্রভোস্ট বরাবর একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন অধ্যাপক এজহারুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ১০ সেপ্টেম্বর ডিসিপ্লিনারি বোর্ড বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়।

এদিকে, আসিফ আল মামুনকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা। সেসময় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়মতান্ত্রিকভাবে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড হয়ে সিন্ডিকেটে উত্থাপিত হয়। ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের কারণেই বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ মাসের শেষে আমাদের আরও একটা সিন্ডিকেট আছে। খুব দ্রুত আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবো।

এছাড়া সেসময় উপাচার্য অধ্যাপক শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সভা আয়োজনের মৌখিক নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শেষেরদিকে শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করে বিষয়টি সিন্ডিকেটে আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১২তম সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

সিদ্ধান্ত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, সিন্ডিকেটে আলোচ্যসূচির প্রায় ২৫টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হতে পারে।

এদিকে বিচার না পেয়ে সাংবাদিক আসিফ আল আমিন বলেন, ইতোপূর্বে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় নামকাওয়াস্তে বিচার করেছে প্রশাসন। বর্তমান প্রশাসন আমাকে নির্যাতনের ঘটনায়ও একই রকমের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চাচ্ছে। অভিযুক্তদের অনেকেরই ফাইনাল পরীক্ষা চলমান রয়েছে। এখন তাদের শাস্তি দিলে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই তাদের বাঁচাতে প্রশাসন এই বিচার কার্যক্রমে বিলম্ব করছে।