জয়নগরে তাণ্ডবের পর অসহায় একের পর এক পরিবার, শিশুগুলি একমুঠো খাওয়ার জন্য রাস্তায়

বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুন হওয়ার ঘটনায় এখনও সেখানে চাপা উত্তেজনা বিরাজমান। কারণ অনেকগুলি বাড়ি অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাতে বাড়িঘর হারিয়ে এখন বহু মানুষ এখানে আশ্রয়হীন। এই অগ্নিসংযোগের জেরে অসহায় অবস্থা হয়ে পড়েছে গ্রামীণ মানুষজনের। নিরুপায় হয়ে রাস্তায় বসে কাঁদছে তাদের খুদে দুধের শিশুগুলি। খিদে পাচ্ছে। কিন্তু খাবার নেই। কে দেবে খাবার?‌ প্রশ্ন জয়নগরের মানুষজনের। যারা এখন সর্বহারা।

এদিকে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, ওই গ্রামবাসীদের কিছু যেন ব্যবস্থা করা যায়। কারণ দুধের শিশুগুলি নিয়ে তাঁরা কোথায় যাবে। ঘরবাড়ি সব তো আগুনে পুড়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। তাই তো নেই কোনও পড়ার কাপড়। চোখে মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে রয়েছে। জয়নগরের বামনগাছির স্থানীয় বাসিন্দারা এখন আকাশের দিকে চেয়ে আছেন। আবার দোলুয়াখাকি গ্রামের বেশ কিছু মহিলা বাচ্চাদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে জয়নগরে দক্ষিণ বারাসাত সিপিআইএম দলীয় কার্যালয়ে। দাউ দাউ করে জ্বলেছে দলুয়াখাঁকি। নিজেদের চোখে দেখেছেন, বাড়িঘর পুড়েছে গ্রামের।

অন্যদিকে সারাবছর গোলা ভরা ধানেও ধরানো হয়েছে আগুন। গ্রামের মহিলারা পুকুর থেকে জল তুলে প্রচুর চেষ্টা করেছেন আগুন নেভানোর। কিন্তু সে আগুন নেভেনি। কাজ করেছেন বাড়িঘর বাঁচানোর। কিন্তু বাঁচেনি। পুড়ে খাক হয়েছে গোটা গ্রাম। এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘‌সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িঘর, জিনিসপত্র কিছু বাকি রাখেনি। নেই খাবার কিছুও। দোকানও জ্বলেছে সেই আগুনে। একটা বাচ্চাকে যে জামা পরাব সেই জামাটুকুও নেই। গায়ে যেগুলি আছে, সেটাই সম্বল। আমাদের আর কিচ্ছু নেই।’‌ কমপক্ষে ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জোড়া খুনে অগ্নিগর্ভ জয়নগর। প্রচুর বাড়িতে চলেছে ভাঙচুর। গ্রাম এখন ধ্বংসস্তূপ।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌গুলি করেছে সাহাবুদ্দিন’, দাবি জয়নগর খুনে ধৃত দুষ্কৃতীর, শাহরুলের ১০ দিন পুলিশ হেফাজত

জয়নগর খুনের সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। যা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল। ভোরের নির্জন রাস্তায় জয়নগরের নিহত তৃণমূল কংগ্রেস নেতার পিছনে দুটি মোটরবাইক নিয়ে অনুসরণ করা হয়। ওই নেতাকে অনুসরণ করে পাঁচজন আততায়ী। তারপরেই চলে গুলি। খুনের ঠিক আগের মুহূর্তের সিসি ক্যামেরার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি খুনের পর থেকে থমথমে জয়নগর। খুনের জন্য লক্ষাধিক টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল। খুনের আগে রেইকি করে ভাড়াটে খুনিরা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এখন এখানের বাসিন্দাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে।