ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, মুসলিম ভাইদের ভাইফোঁটা দিয়ে সম্প্রীতির বার্তা হিন্দু দিদিদের

আজ ভাইফোঁটা। রাজ্যজুড়ে ভাই–দিদি এবং দাদা–বোনদের মধ্যে তা পালিত হচ্ছে। আজ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে এই ছবিই সর্বত্র ধরা পড়ছে। বেজে উঠছে শঙ্খ ধ্বনি। একে অপরকে ফোঁটা দেওয়া, আশীর্বাদ করা এবং উপহার বিনিময় বাড়ি বাড়ি লেগে রয়েছে। সম্পর্কের মেলবন্ধনের এই উৎসবে মেতে উঠেছেন আপামর বাঙালি। তবে এবার দেখা গেল, রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্যদের থেকে ভাইফোঁটা নেন। তবে ধর্মের প্রতিবন্ধকতাকে টপকে এবার সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে ভাতৃদ্বিতীয়ার উৎসব পালন করতে দেখা গেল বর্ধমান জেলায়। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে এমন ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বার্তা দিয়েছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আর এবার যেন সেটাই দেখা গেল বর্ধমানে। মুসলিম ধর্মের ভাইদের ফোঁটা দিয়ে আনন্দিত হিন্দু দিদি–বোনেরা। শ্রীরামপুর সর্বজয়া মাল্টিপারপাস কো–অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ভবনে এই ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়। আর এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই রাজ্যে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়। বিভাজন নয়। একসঙ্গে চলার শপথ যেন এখান থেকেই নেন ভাই–বোনেরা। বেশ কয়েক বছর ধরে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে এই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানের আয়োজন এখানে হয়। মুসলিম বোনেরা যেমন হিন্দু ভাইদের কপালে ফোঁটা দেন। তেমনি হিন্দু বোনেরা মুসলিম ভাইদের কপালে ফোঁটা দেন। এভাবেই পরস্পরের মঙ্গল কামনা করে সম্প্রীতির বার্তা দেন।

এদিকে এই ঘটনা নিয়ে বেশ চর্চাও শুরু হয়েছে। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‌ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই সম্প্রীতির উৎসবে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়াই লক্ষ্য।’‌ আজ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কপালেও ফোঁটা দেন মুসলিম বোন আজিজুন্নেসা খাতুন। এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুশি মুসলিম বোনেরাও। এখানে আসা এক দিদি যুথিকা মজুমদার বলেন, ‘‌১৯৯৮ সাল থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমরা হিন্দু বোনেরা মুসলিম ভাইদের ফোঁটা দিই। মুসলিম বোনেরাও আমাদের হিন্দু ভাইদের ফোঁটা দেয়।’‌ মুসলিম দিদি আয়েসা খাতুন বলেন, ‘‌ধর্মের ভেদাভেদ সরিয়ে রেখে এই উৎসব পালন করা হয়। আমরা এই উৎসবে সামিল হয়ে খুশি।’‌

আরও পড়ুন:‌ ‘‌হিংসা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব’‌, ভাইফোঁটার দিনে কড়া মন্তব্য রাজ্যপালের

অন্যদিকে কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনাদেবী তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় ধ্যানমগ্ন হয়ে পুজো করেন। তাঁরই প্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। তার পর থেকেই ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনায় বোনেরাও ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন। এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যার নাম ভাইফোঁটা উৎসব। পুরাণে এমন কথাই কথিত আছে। বাঙালির ঘরে ঘরে তাই ভাইফোঁটায় বোন–দিদিদের কাছ থেকে ফোঁটা নেন ভাই, দাদারা। ভাইদের সুখ–শান্তির কামনায় এই উৎসব পালন করা হয়।