দিনাজপুরে খাবারপ্রিয় মানুষের জন্য ব্যতিক্রমী মেলা

খেতে কে না ভালোবাসে? সেই খাবারপ্রিয় মানুষের জন্য দিনাজপুরে শুরু হয়েছে ভোজনরসিক মেলা। উদ্যোক্তা দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী এই মেলায় সেরা রাঁধুনিরা ৪৫টি স্টল নিয়ে বসেছেন। সেই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তারাও বসেছেন তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে। মেলার প্রথম দিনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

লুচি-আলুর দম, বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট, হাঁসের মাংস, কালাই রুটি, স্যুপ, বাড়িতে তৈরি কেক, কোপ্তা, পিঁয়াজু, ফুচকা, ঝালমুড়ি, নারকেল নাড়ু, আচার, মধু, মুগের পাপড়, পাটিসাপটা, মালপোয়া, পাকন পিঠা, তেল পিঠা, মুগ পিঠা, চিতুই, ভাপা, নারকেল পিঠা, নুনিয়া পিঠা, ক্ষীরকুলি, ভিজা পিঠা, কলই পিঠাসহ বিভিন্ন খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেরা রাঁধুনিরা। আর ভোজনরসিক ক্রেতারা এসে খাচ্ছেন, মনভরে নিচ্ছেন স্বাদ। এমন মেলার আয়োজন হয়েছে দিনাজপুরে। সেলফি, আড্ডা, নাচগান আর আনন্দ-উল্লাস নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আর দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত এ মেলা প্রাঙ্গণ।
 
১৯ নভেম্বর উদ্যোক্তা দিবস। আর এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত শহরের ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে হয়ে যাওয়া দুই দিনব্যাপী এই মেলায় খাবার প্রিয় মানুষের পদাচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাঁধুনিরা সবাই ছিলেন উদ্যোক্তা, নিজেদের পণ্য নিয়ে উচ্ছ্বাস ছিল উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

উদ্যোক্তা শুক্লা সাহা বলেন, আমরা যারা নারী তারা যে ঘরে বসেই অনেক কিছুই করতে পারি। সংসার পরিচালনার জন্য একটু হলেও সহযোগিতা করতে পারি তার উদাহরণ আমরা নিজেই। আমরা স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা পেয়েছি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলে।

উদ্যোক্তা সাইকা ইয়াসমিন এলিন বলেন, আমরা এই উদ্যোক্তা মেলা করছি উদ্যোক্তা দিবস উপলক্ষে। এই মেলায় প্রায় ৪৫ জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করছেন তাদের নিজস্ব তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে। আমরা এই মেলার মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।

উদ্যোক্তা সুমনা অধিকারী বলেন, আমার পণ্য নিজ খামারে তৈরি মধু ও আলুর পাপড়। এই মেলায় ব্যাপক চাহিদা ছিল এই পণ্য দুটির। আমরা এই মেলায় নিজেদের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি খাবার নিয়েও হাজির হয়েছিলাম। এই মেলায় যারা খাবার খেতে পছন্দ করেন সেসব মানুষের পদাচারণা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

মেলায় অংশ নিতে আসা স্নিগ্ধা বলেন, আমি এখানে এসে ফুচকা, হাতে তৈরি কেক, ফুলকো লুচি, আলুর দমসহ বিভিন্ন কিছু খেয়েছি। সব খাবারও ছিল সুস্বাদু ও মজাদার। এই ধরনের আয়োজন হলে আমরা যারা খাবার খেতে ভালোবাসি তাদের জন্য আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে।

পরিচিতি, প্রতিভা প্রদর্শন ও বিকাশের লক্ষ্যেই মূলত এ মেলার আয়োজন

সিফাত রহমান বলেন, অনেক কিছু খেয়েছি। মধু, নারকেল নাড়ু কিনেছি। এই মেলায় এসে ভিন্ন রকমের একটি অভিজ্ঞতা পেলাম। দুইজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে এসেছিলাম। খুব ভালো লেগেছে।

ফিরোজা বেগম বলেন, দিনাজপুরের কাঠারিভোগ চালের তৈরি পায়েস, লিচুর মধু, মুড়ির নাড়ু, চিড়া এমন কিছু পণ্য কিনেছি। ফুচকা খেয়েছি, কেক খেয়েছি, চপ খেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে।

এই মেলার আয়োজন করে দিনাজপুরের উদ্যোক্তারা নামের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের সভাপতি সম্পা দাস মৌ বলেন, ইতিমধ্যেই এই জেলাতে প্রায় ১৫ হাজার নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। আমাদের এই মেলায় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমন হয়েছিল, যা আমাদের মুগ্ধ করেছে এবং এটাই আমাদের সফলতা। উদ্যোক্তা দিবসে আমাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সবার মন কেড়েছে বলে আমার মনে হয়। মেলায় হরেক রকম পিঠা-পুলি আর সুস্বাদু বাহারি খাবারের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে উদ্যোক্তাদের তৈরি পোশাক, পাটের তৈরি পণ্য, শো-পিচ ও প্রসাধনী সামগ্রী।

তা ছাড়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য আর উদ্যোক্তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচিতি, প্রতিভা প্রদর্শন ও বিকাশের লক্ষ্যেই মূলত এ মেলার আয়োজন।