Rising Antibiotic Resistance In Human Bodies Might Be Linked To Food And Medicinal Habit WHO Warns Of Serious Consequences ABPP

ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: সামান্য জ্বর-সর্দি থেকে কাটাছেঁড়া-ডায়রিয়া, একটু এদিক-ওদিক হলেই মুখে অ্যান্টিবায়োটিক চালান করে দিই আমরা। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই এক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আগে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ামাত্রই যেমন হাতেনাতে ফল পাওয়া যেত, আজকাল অ্যান্টিবায়োটিকের গোটা কোর্স শেষ করে ফেললেও, নিরাময় হচ্ছে না। শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এই সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানীং কালে। আর তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধার ফলেই ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু মানবশরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া আসছে কোথা থেকে? রাজ্য পশু এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় সেই নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। (Rising Antibiotic Resistance)

কাটাছেঁড়া, সাধারণ কাশি, জ্বর, গলাব্যাথা, ডায়রিয়া সবকিছুতেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার রীতি চলে আসছে এবং আজও তা চলছে। কিন্তু তার পরও রোগ থেকে মুক্তি মিলছে না। ওষুধ পাল্টালে ফেললেও, মিলছে না সুফল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁদের শরীরে নানা কারণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছে, তাঁদের ক্ষেত্রেই মূলত এই সমস্যাগুলি দেখা যাচ্ছে। মানবশরীরে এই ব্যাকটিরিয়ার আগমন নিয়ে রাজ্যের পশু এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় যে তথ্য সামনে এনেছে, তা হল, মাছ-মাংস থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ওই ব্যাকটিরিয়া। (Antibiotic Usage)

পশ্চিমবঙ্গ পশু এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রধান সিদ্ধার্থনারায়ণ জোয়ারদার নিজের গবেষণাপত্রে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন।  তাঁর মতে, মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন গবাদি পশু, যেমন- গৃহপালিত মুরগি, শূকর, গো-মাংসে ই-কোলাই, সালমোনেলার মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া থাকে। খাবার হিসেবে যখন সেগুলি গ্রহণ করি আমরা, ওই ব্যাকটিরিয়া আমাদের শরীরে আশ্রয় নেয়।  এবিপি আনন্দে সিদ্ধার্থনারায়ণ বলেন, “মুরগির মতো প্রাণীর শরীরও কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়ার উৎস্যস্থল। আমরা যখন মিরগির মাংস খাই, তার মধ্যে যদি একটি ব্যাকটিরিয়াও বাসা বেঁধে থাকে, আমাদের শরীরে সেটি আশ্রয় নিতে পারে এবং পরবর্তী কালে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে।”

আরও পড়ুন: Antibiotic Resistance: মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও সারছে না রোগ? বাড়ছে উদ্বেগ, জরুরি বৈঠকে বসছে রাজ্য

গবেষণা করতে গিয়ে কলকাতা এবং আশপাশের জেলাগুলির পোলট্রি ফার্মের মুরগির উপর পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, পোলট্রি ফার্মগুলিতে মুরগিকে রোগমুক্ত রাখতে এবং তাদের চেহারা দশাসই করে তুলতে দেদার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। মূলত মুরগির খাবারে মেশানো হয় সেই সব অ্যান্টিবায়োটিক।,যার পোশাকি নাম ‘অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার’৷ আর সেই অ্যান্টিবায়োটিকই বিপদ ডেকে আনছে মানুষের জীবনে৷ সিদ্ধার্থনারায়ণ বলেন, “গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। মুরগি তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে, মাংসল হবে, তাতে ওঁরা লাভবান হবে বলে মনে করেন। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। আইনত কড়া ভাবে এ নিয়ে নজরদারি চালানো উচিত এবং পরিস্থিতি বুঝে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, “পৃথিবীতে যেমন মানুষ রয়েছে, পশুরাও রয়েছে। পশুদের সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে হলেই যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলত পশুদের মল-মূত্র বা তার শরীরের যে অংশ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি, সে ডিমও হতে পারে, মাছও হতে পারে আবার মাংসও হতে পারে, তার মধ্যে কিন্তু ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া থেকে যায়, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বাসা বাঁধে এবং পরবর্তী কালে আমাদের থেকে সন্তানের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন চললে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না এবং বেঘোরে মৃত্যুও হতে পারে।”

ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশন যদিও দাবি করছে, এখন আর মুরগিদের অ্যান্টি বায়োটিক দেওয়া হয় না। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার ২০ বছর আগে ব্যবহার করা হতো। আমাদের পোলট্রি বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অসুবিধার কথা চিন্তা করে, সম্পূর্ণ বিকল্প পদ্ধতি এনেছেন। এর আওতায় গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, পোস্ট বায়োটিক এবং অ্যাসিডিফায়ার। এগুলি ব্যাকটিরিয়া নাশক নয়। এখন পোলট্রিতে গ্রোথ প্রোমোটার হিসেবে ব্যাকটিরিয়ার ব্যবহার অতি সামান্য বলা চলে।”

কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে মানুষের শরীরের এত বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধছে কী করে? চিকিৎসকদের মতে, এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে সরকারকে যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে হবে, তেমনি সতর্ক থাকতে হবে নিজেকেও। যখন তখন দোকানে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে ফেললে হবে না। তিন দিন খেলে চলবে না, পাঁচ দিন, তা না জেনেও অনেকে যেমন তেমন ভাবে ওষুধ খেয়ে নেন। তাতে সাময়িক যদি রোগ সেরেও যায়, মল-মূত্রের মাধ্যমে অন্যের শরীরেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা, তাদের গুণমান এবং কার্যকারিতা কতটা, তাও পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে মত চিকিৎসকদের। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে হবে বলে মত তাঁদের। অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সাধারণ মানুষের প্রবণতা চিন্তায় ফেলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও। দু’বছর আগে কোনও অ্যান্টিবাোটিক শরীরে কাজ করেছিল বলে, আজও তা কাজ করবে, সাধারণ মানুষের এমন ভাবনা-চিন্তাও চিন্তায় ফেলেছে তাদের। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে তারা। প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। ট্রিমোরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে আয়োজিত একটি কনফারেন্সে এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। ১১টি সদস্য দেশের মধ্যে ৫টি দেশ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এখনই সতর্ক না হলে ২০৫০-এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারে প্রতি বছর ১ কোটি লোকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator