মামলা তুলে না নিলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি

আদালতে মামলা করায় দুই মাস ধরে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পরও দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অর্থকষ্টে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই কর্মচারী।

ভুক্তভোগী কর্মচারীর নাম বাবলু মিয়া। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি একই পদে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় তা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেন বাবলু মিয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার মাসিক বেতন বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক।

বাবলু মিয়ার বলেন, মামলা প্রত্যাহার না করলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষকের এমন অমানবিক আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য, শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবকরা।

তবে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের দাবি, বাবলু মিয়া স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।

বাবলু মিয়া বলেন, নিয়োগের পর থেকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিয়মিত বেতনের সঙ্গে পেয়েছেন উচ্চতর গ্রেড।

কিন্তু ২০১৪ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিধিবিধানের অজুহাতে এ সুযোগ নেন প্রধান শিক্ষক। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে ‘অফিস সহায়ক’ পদটি না দিয়ে ওই পদে পছন্দের লোক নিতে দুবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক।

এ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন বাবলু মিয়া। প্রতিকার না পেয়ে গত ২৪ জুলাই আদালতে যান। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারী বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক। বাবলু মিয়া নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও হাজিরা করা থেকে বিরত রাখছেন ওই শিক্ষক। বেতন না পাওয়ায় পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বাবলু মিয়া বলেন, ‘ন্যায় বিচার চেয়ে আদালতে যাওয়ায় আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। নিয়মিত স্কুলে গেলেও গত দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক। বেতন বন্ধের আগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে কোনও নোটিশ দেয়নি। এখন বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘরে খাবার নেই। অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে পারছি না। সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর বিচার চাই।’

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সোহরাওয়ার্দী  বলেন, ‘বাবলু মিয়ার সঙ্গে প্রধান শিক্ষক যা করছেন, এককথায় তা অমানবিক ও অন্যায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, পিয়ন ও অফিস সহায়ক পদটি একই হলেও অফিস সহায়ক পদে লোক নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেই মনগড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি করেছেন প্রধান শিক্ষক। পিয়ন পদে থাকা বাবলু মিয়াকে অফিস সহায়ক পদ না দিয়ে উল্টো চাকরিচ্যুত করতে চাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকসহ একটি চক্র। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।

ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছি। তিনি বেআইনিভাবে বাবলুর বেতন বন্ধ রেখেছেন।’  

তবে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিনের দাবি, ‘বাবলু নিয়মিত স্কুলে আসেন না। ম্যানেজিং কমিটির রেজ্যুলেশন অনুযায়ী তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।’

পিয়ন পদে নিয়োগ নিয়ে নিরাপত্তাকর্মী পদে স্বাক্ষর করার বৈধতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নতুন সৃষ্ট পদগুলোকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। যেহেতু বাবলু আদালতে গিয়েছেন, আদালত থেকে মামলা নিষ্পত্তি হলে তার পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু পদের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। এর মধ্যে কেন ওই কর্মচারীর বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেবো।’