কারও ‘ইন্ধনে’ নয়, সংসদে ‘শক্তিশালী বিরোধী দল হতে’ নির্বাচনে যাবে বিএনএম

রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। দলীয় প্রতীক হিসেবে পেয়েছে নোঙর।  আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সরকারি গোয়েন্দা বাহিনীর সহযোগিতায় বিএনএম গঠিত হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও দলটির নেতারা বলছেন, কারও ইন্ধনে নয়, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হতেই নির্বাচনে যাবে বিএনএম।

বিএনপির সাবেক দুই নেতাকে সামনে রেখে ২০২১ সালে ৭ জুলাই গঠিত হয় বিএনএম। দলটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবদুর রহমান। বর্তমানে তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুর রহমান। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি হেরে যান। পরে দলের রাজনীতিতে বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়ই হয়ে যান। আবদুর রহমান তৎকালীন বরগুনার বেতাগী থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

এছাড়া দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ। তিনিও বর্তমানে দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আছেন। মো. হানিফ সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০২১ সালের ২৮ জুন হঠাৎ করে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর ১০ দিনের মাথায় নতুন দল বিএনএম গড়ে তোলেন।

গত ২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় বিএনএম। এরমধ্যে ১৬ জন স্থায়ী সদস্য রয়েছেন। এখনও চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকটি বড় পদ খালি রয়েছে। এই কার্যানির্বাহী কমিটিতে মহাসচিব ও মুখপাত্রের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন মানবোধিকার কর্মী ড. মো. শাহজাহান। চেয়ারম্যান হিসেবে কে থাকছেন তা নিয়ে চমক থাকবে বলে জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনায় বিএনপি ভাঙতেই তাদের বর্তমান ও দলছুট নেতাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেট রয়েছে—রাজনৈতিক মহলে এমন অভিযোগ থাকলেও বিএনএম-এর  মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলছেন, শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের জেলা–উপজেলা পর্যায়ের অনেক জনপ্রিয় নেতাসহ দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও সমাজে পরিচিতি রয়েছে এমন অনেকেই বিএনএমের আসতে চাচ্ছেন।

তিনি বলেন, যাদের আমাদের দলের নীতির সঙ্গে মিল রয়েছে, সৎ, সাহসী, নির্ভিক, দুর্নীতিমুক্ত, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রয়েছে তাদেরই আমরা দলে রাখছি। দলছুট বা বাগাতে পারি বিষয়টা এরকম না। তবে এটা সত্য বিএনপি থেকে আপাতত বেশি আসছে এবং সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসছে।

গত ২০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি আত্মপ্রকাশের দিন বিএনএম যোগ দিয়েছেন বিএনপির সাবেক তিন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনএম এ নাম লেখানো অপর দুই বিএনপি নেতা হলেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল ওহাব ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামসুল আবেদিন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

সরকারের ইন্ধন রয়েছে এমন দাবিকে নাকচ করে বিএনএম এর মহাসচিব বলেন, সরকারের কোনও ইন্ধন বা সহযোগিতা আমরা কেন নিতে যাবো? সরকারই তো আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। আমাদের যে যোগ্যতাসম্পন্ন লোকজন আছে, সরকারই এক সময় আমাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে। আমরা সরকারের ইন্ধনে গঠিত এটা গুঞ্জন, গুঞ্জনই থাকবে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেতে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে দাবি করেছে বিএনএম। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে বলে আশাবাদী দলটির নেতারা। ইতোমধ্যে ২১ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে দলটি। প্রথমদিন ১০০টির মত ফরম বিক্রি হয়েছে বলে জানান দলটির মহাসচিব মো. শাহজাহান।

তিনি বলেন, আমরা নতুন দল হিসেবে রাজনীতিতে এসেছি। আমাদের নির্বাচনে না যাওয়ার কোনও কারণ নেই। বরং সংসদে আমরা একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হয়ে উঠবো বলে আশা করছি, যারা সংসদে দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে।

সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রত্যাশা রাখছে বিএনএম এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা আশায় আছি। যদি এই আশাটা বাস্তবায়িত না তার দায় নির্বাচন কমিশনের। ইসির দ্বায়িত্ব নির্বাচনের সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা যেন আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারি। তবে আমরা আশাবাদী হয়েই নির্বাচনে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন- 

চেয়ারম্যান পদে ‘চমক’ ও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলো বিএনএম

ইসির কাছে বিএনএম’র ৫ দাবি

ইসির চূড়ান্ত নিবন্ধন পেলো বিএনএম ও বিএসপি