নিষ্ঠুরতার বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা নেই, দুর্ব্যবহার ও দায়হীনতাও নিষ্ঠুরতা: হাইকোর্ট

নিষ্ঠুরতার কোনও বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা নেই। দুর্বব্যবহার বা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে দাম্পত্য নষ্ট করাও নিষ্ঠুরতা হতে পারে। সম্প্রতি এক বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ আদালতের।

মামলার রায়ে এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রী এবং সন্তানের প্রতি দুর্ব্যবহার ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে নিষ্ঠুরতা বলে বলে উল্লেখ করেছে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, একজনের কাছে যা নিষ্ঠুরতা অন্যজনের কাছে তা নাও মনে হতে পার। কে কোনও সামাজিক পরিস্থিতি ও শিক্ষায় বড় হচ্ছে সবটাই তার উপর নির্ভর করে। এর কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এই সব বিবেচনা করে আদালত নিষ্ঠুরতা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে পারে।

এক দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের রায় দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী। ওই ব্যক্তি আদালতে নিজেই সওয়াল করছিলেন। অন্যদিকে স্ত্রী পক্ষে সওয়াল করছিলেন তিন আইনজীবী।

তাঁরা স্ত্রীর বয়ান আদালতে পেশ করে জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী তাঁর উপর নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময়ও স্বামীর থেকে কোনও সাহায্য পাননি। সন্তানের কাটা ঠোঁটের (ক্লেফট লিপ) সমস্যা ছিল। অস্ত্রোপচারের জন্যও কোনও সাহায্য করেননি ওই ব্যক্তি।

(পড়তে পারেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আরও একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট)

স্ত্রী আরও অভিযোগ ছিল, চাকরি করতে গেলেও পদে পদে বাধার সৃষ্টি করেছেন ওই ব্যক্তি। বেতনের টাকাও রাখতে হতো যৌথ অ্যাকাউন্টে। একই বাড়িতে স্ত্রী সন্তানের থেকে আলাদা থাকতেন স্বামী। আদালত একেই ‘নিষ্ঠুরতা’ বলেছে।

ডিভিশন বেঞ্চ তার রায়ে বলেছে, প্রেম, ভালবাসা তো দূরের কথা ওই ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর প্রতি কোনও সম্মান দেখাননি। এই পরিস্থিতিতে মহিলাকে যদি স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে সংসার করতে বলা হয়, তবে তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

কলকাতা হাইকোর্ট স্বামীর আবেদন খারিজ করে নিম্ন আদালতের দেওয়া ডিভোর্সের রায় বহাল রেখেছে।