সিলেটে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন যারা

সিলেটে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন কয়েকজন নেতা। ইতোমধ্যে তারা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে প্রার্থী হতে এটিকেই এখন অনুপ্রেরণার জায়গা হিসেবে দেখছেন নৌকা বঞ্চিতরা। তাই মনোনয়নবঞ্চিতরা নৌকার বিপক্ষে লড়ার সাহস পাচ্ছেন।

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ

সিলেট-১ আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ড. এ কে আবুল মোমেন। আর সিলেট-৩ আসনে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। নৌকার বিপক্ষে নির্বাচনের জন্য এই দুই আসন থেকেই সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। মিসবাহ এবার সিলেট-১ ও ৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নৌকা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গত নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এর আগে টানা দুই মেয়াদে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মোমেনের বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাধীনতার পর থেকে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করেছে, ফলে এই আসনটি ভোটের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ টানা তিনবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট জেলা জজ কোর্টের পিপির দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন। গত সিলেট সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমি সিলেট থেকে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। এজন্য সিলেটের মানুষজনের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সিলেট-১ আসন থেকে এবার নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের নেত্রীও সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।

ইহতেশামুল হক চৌধুরী

সিলেট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দুলাল এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে দল থেকে বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন।

নির্বাচনের বিষয়ে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আজকালের মধ্যে জমা দেবো। ভোটাররা এবার পরিবর্তন চায়। তাদের চাপেই আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

সরওয়ার হোসেন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সারোয়ার হোসেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই ঘোষণা দেন।

সরওয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘সিলেট-৬ গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার উন্নয়ন এবং সর্বস্তরের জনগণের একজন সেবক হিসেবে পাশে থাকার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো। আমার প্রবাসী ভাই-বোনসহ সবার দোয়া চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মানুষ ও দেশকে ভালোবাসেন আমিও সেভাবে বাকি জীবনটুকু এলাকার গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের পাশে থেকে কাটিয়ে দিতে চাই।’

সিলেট-৬ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার আসনে এখনও কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।

মোয়াজ্জেম হোসেন রতন

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-মধ্যনগর-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ) আসনে একটানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দখলবাজির নানা অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েন। নতুন মুখ হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত সরকার। দলীয় নেতারা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।

সায়েদুল হক সুমন

হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সোমবার প্রার্থী নিজেই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। তাই আমি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো।’

এই আসনে নৌকার প্রার্থী বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তার বিপক্ষে লড়বেন সুমন। মঙ্গলবার দুপুরে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিকের কাছ থেকে সুমনের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রহমান। দিনব্যাপী চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুড়ি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন সুমন।