HIV Positive AIDS Patients Life Expectancy Increased A Lot With Long Term ART Or Antiretroviral Therapy ABP LIVE Exclusive ABPP

কলকাতা : খুব কাছের বন্ধু  ছিল ও। মুম্বইতে থাকত। তরতাজা চেহারা। রোগবালাই দূরেই থাকত ওর থেকে। কিন্তু কী যে হল…হঠাৎই একের পর এক রোগে ধরতে লাগল।  হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি। বারবার জ্বর, গলা ব্যথা , ব়্যাশ। কোনও কিছু হলেই সারতে চাইত না। চোখের সামনে শরীরটা ভেঙে যেতে লাগল। আমার মন বলছিল, কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু যখন পরীক্ষা করাল , তখন অনেকটা কাল পেরিয়ে গিয়েছে। লাস্ট স্টেজ। এইচআইভি পজিটিভ। এইডস। জানলাম, ওর স্বামী পজিটিভ ছিলেন। তার থেকেই আক্রান্ত হয়েছিল ও। পরীক্ষা করায়নি। ফলে ওষুধও শুরু হয়নি। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেল তরতর করে। কিচ্ছু করতে পারলাম না। গলা ভারী হয়ে আসছিল বিশাখা লস্করের। কলকাতা সহ সারা বাংলার ১৪ টি যৌনপল্লির মেয়েদের উন্নয়নের জন্য দিনরাত কাজ করেন তিনি। দুর্বার নামক সমাজসেবী সংস্থার হয়ে। সেই সূত্রে এইডসের মতো অসুখ নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা প্রচার তো করতেই হয়। আশেপাশে বহু মানুষকেই চলে যেতে দেখেছেন অকালে, এইচআইভির মারণ কামড়ে। কিন্তু এইচআইভি মানেই কি জীবন শেষ ? নিশ্চিত মৃত্যু? 
না, দিনকাল বদলেছে। ঠিকমতো ওষুধ, পথ্য ও সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক একজন এইচআইভি আক্রান্তকেও স্বাভাবিক জীবন দিতে পারে, এতটাই এগিয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্র। কিন্তু এগুলো ছাড়া কিন্তু এইচআইভি ভয়াবহ। এই বিষয়টাই প্রচার করছে সমাজসেবী সংস্থা দুর্বার বিভিন্ন যৌনপল্লিতে। কারণ সবকিছু জেনেও এখনও সুরক্ষা ছাড়া যৌনসম্পর্ক স্থাপনে নাছোড়বান্দা বহু মানুষই। আর তাতেই ঘটছে বিপদ। 

সরকারি তথ্য বলছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ২৪ লাখ । দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আক্রান্ত রয়েছে। শীর্ষ তিনে রয়েছে মহারাষ্ট্র,অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক। ভারতে ২০২১ সালেই  নতুন করে  সংক্রমিত হয়েছেন আনুমানিক ৬৭ হাজারের কাছাকাছি।

তবে গত কয়েকবছরে উল্লেখযোগ্যভাবে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়েছে ভারত  এইডসের একমাত্র চিকিৎসা এআরটিকে অনেক সহজলভ্য করে তুলে। অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি)কে  সাশ্রয়ী এবং এইচআইভি আক্রান্ত ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য , বললেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায়।  চিকিৎসক জানালেন, আগে এই  অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপির ওষুধ তৈরির অধিকার ছিল শুধু কয়েকটি বিদেশি সংস্থার। এই ওষুধ যাতে দেশীয় ওষুধপ্রস্তুতকারীরাও তৈরি করতে পারে ও সস্তা করে তুলতে পারে মারণরোগের চিকিৎসা,তার জন্য রীতিমতো আন্দোলন করে ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। এখন তো নিয়মমতো এআরটি করালে আর পাঁচটা ক্রনিক অসুখের মতোই অসুখ এইডস, যা নিয়ে বছরের পর পর, দশকের পর দশক স্বাভাবিকজীবন যাপন করতে পারেন এইচআইভি পজিটিভ মানুষ। এমনকী কন্ডোম ব্যবহার করে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করলে যৌনজীবনেও দাঁড়ি পড়ে না। জানালেন চিকিৎসক। 

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায় জানালেন, অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্কের মাধ্যমেই প্রধাণত এইচআইভি ছড়ায়। এটি এক ধরনের রেট্রো ভাইরাস। একাধিক সঙ্গী, অনিয়ন্ত্রিত যৌনজীবনই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইডসের কারণ। তাই যৌনপল্লিগুলি থেকে এই অসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আগে বেশি থাকত। তবে দুর্বার নামক সমাজসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি বিশাখা লস্কর জানালেন, এখন নিয়মিত দেহপসারিণীদের সতর্ক করা হয়, সচেতন করা হয় , যাতে তাঁরা কোনওভাবেই অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হন। কাউন্সেলিং করা হয় নিয়মিত। তবে আগের থেকে সচেতনতাও বেড়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও কমানো গিয়েছে রোগনির্ণয় তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হওয়াতে। 

এছাড়াও এইচআইভি আক্রান্তের ব্যবহৃত সূঁচ কিংবা ব্লেড ব্যবহার করলে বা আক্রান্ত রোগীর সার্জিক্যাল ব্লেড কিংবা ইঞ্জেকশন নিডল ব্যবহার করলে সংক্রমণ হয়। প্রেগনেন্সির সময় আক্রান্ত মায়ের দেহ থেকে শিশুর দেহেও সংক্রমণ হতে পারে, যাকে বলে প্লাসেন্টাল ট্রান্সফার। ট্যাটু করা কিংবা বডি পিয়ার্সিংয়ের সময়ও অন্যের ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহার মারাত্মক হতে পারে।  

এইচআইভি আক্রান্ত হলেই কি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু? না। ধীরে ধীরে দেখা যেতে থাকে উপসর্গগুলি। 
যদি কেউ এইচআইভি আক্রান্ত হন তাহলে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যেই লক্ষণ গুলি দেখা যেতে শুরু করে । যেমন প্রাথমিকভাবে 

  • জ্বর
  • ঠাণ্ডা লাগা
  • ফুসকুড়ি
  • রাতের ঘাম দেওয়া
  • পেশীতে যন্ত্রণা
  • গলা ব্যথা
  • ক্লান্তি লাগা
  •  লিম্ফ নোড ফোলা
  • মুখের আলসার হওয়া ইত্যাদি

কিন্তু কিছু লোকের এইচআইভির এই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু কেউ যদি মনে করে যে তিনি এইচআইভি রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন,তাহলে এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষা করার পর,পরীক্ষার ফলাফল জানতে হবে।  এইচআইভি পজিটিভ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা শুরু করতে হবে। 

এইচআইভি আর এইডস কি এক ? AIDS সেই অর্থে HIV infection এর লেট স্টেজ, যে সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারে  ভেঙে পড় ( body’s immune system ) । তবে HIV  আক্রান্ত হয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করালে AIDS হয় না। তবে তার জন্য খুবই সচেতন হতে হবে আর খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হতে হবে।  

ডা. যোগীরাজ রায় জানালেন,  HIV র চিকিৎসা হল antiretroviral therapy (ART)। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এইচআইভির ওষুধ খাওয়া শুরু করা উচিত। তা এআরটি এইচআইভি নিরাময় করতে পারে না, তবে এইচআইভির ওষুধ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘতর, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে সহায়তা করে। আর এইচআইভি চিকিত্সার  প্রধান লক্ষ্যই হল একজন ব্যক্তির ভাইরাল লোড সনাক্তই করা যায় না এমন স্তরে নামিয়ে আনা।  

১৯৮৮ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO র তরফে ১ ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এই দিনে সারা বিশ্বের মানুষের এই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একত্রিত হওয়ার বার্তা প্রদান করা হয়। এই রোগে আক্রান্তদের পাশে থাকার ভাবনাই তুলে ধরা হয় ১ ডিসেম্বর। 

এইডসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ 

  •  প্রতিবার যৌন মিলনের সময় সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করে নিরাপদ যৌন অভ্যাস করতে হবে। একাধিক সঙ্গী ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন এড়িয়ে চলতে হবে।
  • কোনও রকমভাবে সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করলে, এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।  বিশেষ করে যদি তেমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকে বা অজানা কারও সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক করে থাকেন।
  • যৌন সঙ্গীর সংখ্যা সীমিত করতে হবে।  এইচআইভি পরীক্ষা আছে এমন পার্টনার বেছে নিন।
  • সূঁচ বা অন্য কোনও মেডিক্যাল সামগ্রী একে অপরের সঙ্গে ভাগ করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এর থেকেইএইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে।
  • যদি অ্যাক্সিডেন্টালি কেউ এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন, তাহলে প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস (PrEP) নিতে হবে।  PrEP (pre-exposure prophylaxis)  হল একটি  ওষুধ যা উল্লেখযোগ্যভাবে HIV সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে
  • যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়ে থাকেন, তাহলে ভাইরাল লোড কমাতে এবং ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে  স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা নির্ধারিত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। 
  • এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে পড়াশোনা করা জরুরি। প্রতিরোধের কৌশল এবং চিকিত্সা সম্পর্কে অবগত থাকুন।
  •   এইচআইভি পজিটিভ কেউ  গর্ভবতী হলে,শিশুর মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য উপযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। 

 

তথ্য সূত্র 
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায়
বিশাখা লস্কর, সচিব, দুর্বার
https://www.hiv.gov/

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator