Video of Rescued Workers: ১৭ দিন পর ভোরের সূর্যের দেখা পেলেন ৪১ শ্রমিক, কেমন কাটল নতুন সকাল?

বুধবারের সকাল আক্ষরিক অর্থেই যেন উত্তরকাশীর টানেলের ৪১ শ্রমিকের কাছে এক ‘নতুন সূচনা’। টানা ১৭ দিন অন্ধকার সুড়ঙ্গে থাকার পর গতকাল সন্ধ্যায় মুক্তি মিলেছিল। আর আজ সকালে তাদের ঘুম ভাঙে ঝকে ঝকে ঘরে। তখন তারা শুয়ে তকতকে বিছানায়। উত্তরকাশীর টানেল থেকে উদ্ধার হওয়া ৪১ জন শ্রমিককেই আপাতত রাখা হয়েছে চিনিয়ালিসাউর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। গতকালই তাঁদের শরীর পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য ডিরেক্টর ডঃ প্রবীক কুমার জানান, কোনও রোগীরই শরীরে কোনও জটিল রোগ ধরা পড়েনি। আজকে সকালে সব শ্রমিকেরই পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য চেকআপ হবে। তা হয়ে যাওয়ার পরই তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে টানেল থেকে মুক্তি পাওয়া এক শ্রমিক, বিশ্বজিৎ কুমার বর্মা নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আটকে পড়ার প্রথম ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আমাদের সমস্যা হয়েছিল। তবে এরপর আমাদের কাছ খাবার ও জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১০ দিনের মাথায় আরও একটি পাইপ আমাদের ওখানে পৌঁছে যায়। তাতে করে ডাল, ভাল, রুটি, ড্রাইফ্রুট সবই এসেছে।’ এদিকে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সুবোধ কুমার বর্মা বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। কোনও সমস্যা হচ্ছে না আমার।’ বাকি শ্রমিকদের মধ্যেও কেউ শারীরিক কোনও অসুস্থতার কথা জানাননি। এরই মধ্যে সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শ্রমিকদের একটি ভিডিয়ো করেছিলেন উদ্ধার হওয়া একজন। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেছে সংবাদসংস্থা এএনআই।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ দিন ধরে উত্তরকাশীর টানেলে আটকে ছিলেন বাংলার ৩ সহ মোট ৪১ জন শ্রমিক। গত সপ্তাহে উদ্ধারকাজে গতি এসেছিল। তবে হিমালয়ের খামখেয়ালিপনার জেরে বারবারই থমকেছে ড্রিলিংয়ের কাজ। এর জেরে অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রহর গুনতে হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। এর আগে গত সপ্তাহে দিনে দু’বার হিমালয়ের খামখেয়ালিপনায় আটকে যায় উদ্ধারকাজ। গত বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও ফের একবার ড্রিল করতে গিয়ে পাহাড়ে কোনও এক ধাতব বস্তুর মুখোমুখি হতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। এর জেরে ড্রিল মেশিন থমকে যায়। এর আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, আরও ১২ মিটার ড্রিল করলেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সেটুকু পথ পাড়ি দিতেই অনেক বাধার মুখে পড়তে হয় অগার মেশিনকে। এই আবহে অগার মেশিনের সাহায্যে ড্রিল করার বিকল্প থেকে সরে আসে উদ্ধারকারী দল। অথচ গত বুধবার সন্ধ্যা-রাতের দিকে মনে করা হচ্ছিল, যে কোনও মুহূর্তে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এরই মাঝে শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়, অগার মেশিনের সাহায্যে আর ড্রিল করা হবে না। এই আবহে শুরু হয় ব়্যাট হোল মাইনিং। হাতেই সুড়ঙ্গ কেটে পৌঁছে যাওয়া হয় সেই ৪১ শ্রমিকের কাছে। এই আবহে গত সন্ধ্যায় বের করে আনা হয় তাঁদের।

রিপোর্ট অনুযায়ী, সিল্কিয়ারা এবং দন্ডলগাওঁয়ের মাঝে তৈরি হচ্ছিল এই টানেলটি। গত ১২ নভেম্বর খুব ভোরে সেই টানেলে ধস নেমেছিল। এই গোটা টানেলটি সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা বলে জানা যায়। তারই মধ্যে ১৫০ মিটার লম্বা এলাকা জুড়ে ধসটা নামে সেদিন ভোর ৪টে নাগাদ। জানা যায়, টানেলের সামনের দিক থেকে ভিতরের দিকে প্রায় ১৫০ মিটার জমি ধসে পড়ে ওপর থেকে। অর্থাৎ, টানেলের ছাদ ধসে পড়ে। তাতেই আটকা পড়েন শ্রমিকরা। তবে লাগাতার প্রচেষ্টায় অবশেষে উদ্ধার করা গিয়েছে তাদের। তাঁদের সবাই অক্ষত অবস্থায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। প্রসঙ্গত, ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কটি চারধাম রোড প্রোজেক্টের অংশ। এই সড়ক সারা বছর সব ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই চালু থাকার কথা। এই সড়কটি তৈরি হলে উত্তরকাশী এবং যমুনোত্রীর মধ্যে যারাপথ ২৬ কিলোমিটার কমে আসবে।