ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার তৎপরতা সফল হতে দেওয়া যাবে না: সাকি

সরকার ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার ধ্বংস করছে অভিযোগ করে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারের এই তৎপরতা কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না।’

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। 

‘শ্রমিক হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, কর্মচ্যুতদের পুনর্বহাল, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, গার্মেন্টস শিল্প ঘোষিত মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা পুনর্নিনির্ধারণ’—এসব দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার এভাবে নির্বাচন করতে পারলে, আপনি আমি কিছু বলি আর না বলি, জনগণ কিছু বলুক আর না বলুক, আজকে পশ্চিমা বিশ্ব কিছু বলবে। এই সরকার এভাবে আমার আপনার পেটে যে লাথি মারছে তা না, তারা পুরো দেশ নিয়ে বাজি ধরছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ আমেরিকা শ্রম অধিকারের নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। তারা (পশ্চিমা দেশ) বলেছে—এই ধরনের একতরফা নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিকের অধিকার খর্ব হলে, তারা আমাদের রফতানি খাত গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। লাখ লাখ শ্রমিক যে শিল্প গড়ে তুলেছেন, দেশপ্রেমিক উদ্যোক্তারা যে শিল্প গড়ে তুলেছেন, এই সরকার ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক বাজার ধ্বংস করছে। সরকারের এই তৎপরতাকে কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, তারা সফল হলে এ দেশে, দেশের মানুষ, শ্রমিকরা ধ্বংস হবে। কাজেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’

গার্মেন্টস শ্রমিকরা প্রতি পাঁচ বছর পরপরই একবার মজুরির দাবিতে আন্দোলন করেন উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘আইনেই বলা আছে—পাঁচ বছর পর পর মজুরি সমন্বয় করবে। সেই কারণে আমরা দেখেছি, পাঁচ বছরে একবার আন্দোলন দানা বাঁধে। জিনিসপত্রের দাম কীভাবে করোনাকালে এবং পরবর্তী সময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লো, আমরা সবাই জানি। সরকার এই বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্যদের জন্য নানান ব্যবস্থা করেছে।’

সমাবেশে অংশ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, আজকে নির্বাচনের নামে নাটক হচ্ছে, এই নাটক আওয়ামী লীগ করছে না। সরকার করছে না, বিদেশিরাও করছে না, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের টাকা-পয়সা, অর্থবিত্ত-ক্ষমতাকে ভোগ করার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এই সাজানো-পাতানো নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ৩৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর বহির্বিশ্ব বলছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে এর ভুক্তভোগী হবো আমরা জনগণ।’

মুক্তির জন্য সরকারের পতন ঘটাতেই হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ ৫২ বছরের রাজনীতিতে সুবিধাবাদী লোক, দালাল চরিত্রহীন তৈরি হয়েছে; যারা আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলছে। স্বৈরাচারের দোসর হয়েছে, যার ফল আজকে আমরা ভোগ করছি। আজকে সারা দেশের কৃষক শ্রমিকদের রাজনৈতিক অধিকার কায়েম করার জন্য সবাইকে জেগে উঠতে হবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক এএএম ফয়েজ হোসেন, নির্বাহী সমন্বয়ক আব্দুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।