‘স্বামী গায়ে হাত তুললেও ছেড়ে আসতে পারি না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৭ বছর। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী আমি, ভালো পরিবার ও বন্ধু আছে। তারপরেও আমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকি। সবসময় অস্থিরতা কাজ করে। ঘর সাজাতে আমার ভালো লাগে। আমি অনেক ভিডিও দেখি ঘর সাজানো সংক্রান্ত। কিন্তু টাকা থাকা সত্ত্বেও নিজের ঘর গোছানোর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কিনি না। কেমন যেন ক্লান্ত লাগে। সিদ্ধান্তহীনতায়ও ভুগি। মনে হয় কোনটা রেখে কোনটা কিনবো। বেশিরভাগ সময় বিরক্ত হয়ে ঘর নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা বাদ দিই। না হয় বাড়তি জিনিস কিনে ঘর আরও অগোছালো করে ফেলি আর টাকা নষ্ট করি। এমন আচরণ জীবনের প্রায় সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই হয়। আমার সমস্যাটার কারণ কী? কেন আমি সবকিছু নিয়ে এত অস্থির? 

উত্তর: আপনার কোন কিছুর অভাব নেই বলেই আপনি সবসময় মনমরা হয়ে থাকেন। আপনি বোরডোমে ভুগছেন। একঘেঁয়ে, নিশ্চিত জীবনে যে কেউই বোরডোমে ভুগবে। জীবন সংগ্রাম করার উপযোগী হয়ে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে! সংগ্রাম না থাকলে জীবন অর্থহীন মনে হবে। বনের বাঘকে এবং হরিনকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। তাদেরকে চিড়িয়াখানায় নিরাপদ খাঁচার মধ্যে রেখে তাদের খাদ্য নিশ্চিত করলে তারাও বোরডোমের শিকার হবে। অনিশ্চিত সংগ্রামমুখর জঙ্গলই তাদের কাছে আকর্ষণীয় নিরাপদ কারাগারের চাইতে। সুতরাং এই বোরডোম অবস্থা থেকে বের হতে হলে আপনার নিজেকে অনিশ্চিত সংগ্রামময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে হবে। আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান মেধাবী একজন মানুষ বলেই আপনি বোরডোমে আক্রান্ত হয়েছেন। আপনি অলস ও পলায়ন মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ হলে এরকম অনুভব করতেন না। নিজের প্রকৃতি সম্পর্কে এই তথ্য আপনার মস্তিষ্কের প্রয়োজন ছিল। এখন আপনাকে বোরডোমমুক্ত করার জন্য সচেতনভাবে নিজে থেকে থেকে কিছু করতে হবে না। আপনার মস্তিষ্ক নিজে থেকে জীবনের জন্য অপরিহার্য অনিশ্চিত বা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি খুঁজে নেবে এবং খুঁজে না পেলে তৈরি করে নেবে।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম পাঁচ বছর আগে। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়েটা ভেঙেছিল স্বামীর গায়ে হাত তোলার অভ্যাসের কারণে। দ্বিতীয় বিয়েটাও একই কারণে ভাঙতে বসেছে। তবে আমি কখনোই নিজ থেকে সরে আসতে পারি না। মানসিকভাবে আমি খুবই দুর্বল। স্বামী গায়ে হাত তুললেও ছেড়ে আসতে পারি না। নিজের উপর খুব রাগ হয় আমার।

উত্তর: আপনার এই প্রকৃতি থেকে আপনি অতীতেও মুক্ত হতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। এর কারণ হলো আমরা কখনোই আমাদের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারি না। সুতরাং আপনি নিজেকে বা নিজের প্রকৃতিকে পরিবর্তন শত চেষ্টা করে গেলেও ভবিষ্যতে একইভাবে ব্যর্থ হবেন। আপনি যখন নিজেকে পরিবর্তন করার অসম্ভব চেষ্টা বন্ধ করতে সক্ষম হবেন, তখনই আপনার ভেতরে পরিবর্তন আসবে। এবং যখন আপনার প্রকৃতি পরিবর্তনের সময় আসবে তখন সেটা আপনা আপনিই হবে, আপনি চাইলেও হবে, না চাইলেও হবে। এই মুহূর্তে আপনার নিজের প্রকৃতি পরিবর্তনের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। নিজের ভালো এবং মন্দ সকল বৈশিষ্ট্যকে আপন করে নিতে হবে। পরিবর্তন করার ব্যর্থ চেষ্টা করা বন্ধ করলেই আপনার মানসিক শক্তি সংহত হবে, এখনকার মতো আর ক্ষয় আর হবে না। সে পর্যন্ত অপেক্ষা আপনাকে করতেই হবে। এখনকার জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও মেডিটেশন করুন। নিজেকে জনসেবামূলক যেকোন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করুন। প্রকৃতি এবং মানুষের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান।