Parent Has To Be Aware About Autism, Know The Symptoms, Therapy Process And More Abpp

প্রিয়াঙ্কা দত্ত, কলকাতা: অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড খ্যাত ল্যুই ক্যারল থেকে চার্লস ডারউইন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, মোৎসার্ট, থেকে শিশু সাহিত্যিক হ্যান্স অ্যান্ডারসন অ্যালবার্ট আইনস্টাইনই হোক বা বিল গেটস, স্টিভ জোবস এই নামগুলো শুধু পরিচিতই নন, বিশ্ব বিখ্যাতও। সাফল্যের শীর্ষে থাকা এই ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই অটিস্টিক। কিন্তু তাঁদের অবদান বদলে দিয়েছে তথাকতিত স্বাভাবিক মানুষের জীবন। তাহলে তথ্য বলছে অটিস্টিক নিয়েও সেরা হওয়া অসম্ভব নয়। 

কী বলছে পরিসংখ্যান: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে অন্তত একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু রয়েছে।  আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য বলছে প্রতি ৩৬ জন শিশুর মাঝে একজন শিশু অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে শনাক্ত হচ্ছে।  

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা এএসডি (Autism Spectrum Disorders), এটি একটি জটিল স্নায়বিক বিকাশ সংক্রান্ত সমস্যা। সেই অর্থে অটিজিম কোনও একটি নির্দিষ্ট অসুখ নয়। কাজেই ওষুধ দিয়ে রোগ মুক্ত হওয়ার কোনও প্রশ্ন এখানে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি পরিস্থিতি। সাধারণত অনেকগুলো আচরণগত সমস্যাকে একসঙ্গে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলা হয়। কিন্তু এ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের কোনও স্বচ্ছ ধারনা না থাকায় এই পরিস্থিতিই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে। আর ভয়ঙ্কর অসুখ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় অটিজমকে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার প্রথমে দরকার সচেতনতা। 

লক্ষণ: শিশু অটিস্টিক কিনা জন্মের পর তার চেহারা দেখে বোঝা অসম্ভব। সাধারণত দেড় থেকে ৩ বছরে মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আচরণগত অবস্থা লক্ষ করা যায়। এটি বংশগত বা শারীরিক কোনও রোগ নয়। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বেশ অনেকগুলি জটিল বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি, যেমন আচরণগত সমস্যা, সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা বা কিছুক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ আচরণ একসঙ্গে মিলে এই অবস্থা তৈরি হয়। এটি বয়সের সঙ্গে ধাপে ধাপে প্রকাশ পেতে থাকে। 

কী কী অসুবিধা:

  • সে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না
  • শিশু অস্থির ও চঞ্চল প্রকৃতির হতে পারে
  • রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে
  • অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ অথবা স্পর্শের প্রতি অতি সংবেদনশীল বা প্রতিক্রিয়াহীন হতে পারে
  • কারও কারও খিঁচুনি সমস্যা হতে পারে

বাবা-মায়েরা কীভাবে অটিস্টিক সন্তানকে সামাল দেবেন? সন্তান এবং বাবা-মায়ের করণীয় নিয়ে এবিপি লাইভকে বিস্তারিত জানিয়েছেন, নীলাঞ্জনা রম্বথু (Sunshine Autism Care Society, Consultant and RCI holder ASD)

নীলাঞ্জনা বলছেন, ‘বাবা মায়েরা বোঝেনই না অটিস্টিক সন্তানদের সঙ্গে কী করতে হবে। ফলে বিভ্রান্ত হন, ঠকেও যান অনেক ক্ষেত্রে। তাই সবার আগে বিষয়টি সম্পর্কে বাবা-মাকে সচ্ছ ধারনা রাখতে হবে’, ওষুধ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার একদম বিপরীতে তিনি। নিলাঞ্জনার পরামর্শ, বাবা-মাকে যে তিনটি জিনিস মনে রাখতে হবে তার প্রথমটিই হল অ্যাকসেপ্টেন্স। বাবা-মাকে মানতে হবে তাঁর বাচ্চার মধ্যে অটিজম শনাক্ত করা গেছে। না মানলে পরবর্তী ধাপগুলো সামলে ওঠা কঠিন। খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায় শুরুতে অটিস্টিক সন্তানকে মেনেই নিতে পারেন না তাঁরা। উপরন্তু সমাজ ব্যবস্থায় একাধিক গলদ থাকায় বাবা-মায়েরা ভরসা হারিয়ে ফেলেন। তাই ভয় পেয়েই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। শারীরিক কোনও অক্ষমতা না থাকায় বুঝতেও দেরি হয় অনেক সময়ে। তাই সবার আগে সমস্য়ায় গোড়ায় পৌঁছে সেটা বুঝলেই ইতিবাচক ফল মিলবেই।

দ্বিতীয়, হ্যান্ডেলিং। বাচ্চাকে সামাল দিতে জানা খুব জরুরি। আর এটার জন্য অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবকের সঠিক ট্রেনিং দরকার । অটিজম মানেই সারাদিন বাচ্চার থেরাপি নয়। এটা অনেকটাই নির্ভয় করে পেরেন্টিং-এর ওপরেও। কীভাবে, কোন পরিবেশে সন্তানকে বড় করা হচ্ছে এটাও গুরুত্বপূর্ণ। আচরণের নিচেই চাপা পরে থাকে শিশুর ক্ষমতাগুলো। কাজেই অটিস্টিক বাচ্চা যে ধরনের আচরণ করছে সেগুলো সঠিকভাবে সামলে দিলে বাচ্চার মধ্য়ে লুকিয়ে থাকা সক্ষমতাগুলোও বিকশিত হবে। 

তৃতীয়, একজন অটিস্টিক শিশুকে সামাল দিতে পুঁথিগত বিশাল কোনও শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই দু-জন মানুষের বাবা-মা হিসেবেও জন্ম হয়। এখান থেকেও এক নতুন শিক্ষার শুরু হয়। কাজেই বাচ্চাকে যতই থেরাপি, প্রোগ্রাম বা ওষুধ দেওয়া হোক না কেন, বাবা-মার যতই কম ডিগ্রি থাকুক না কেন, অটিস্টিক বাচ্চাকে সবচেয়ে ভালভাবে সামলাতে পারেন তার বাবা-মায়েরাই। তাই বাচ্চার থেরাপি শুরুর আগেও বাবা-মাকে যুক্ত হয়ে সচেতন হতে হবে।  

নীলাঞ্জনার কথায়, ‘তাই আমি সবার আগে বাবা-মায়ের ওপর কাজ করি। তাঁদের  ট্রেনিং দিই যে, কীভাবে কাজ করলে উপকার মিলবে, এমন অনেক বাচ্চা রয়েছে যাঁরা সঠিক ট্রেনিং নেওয়ার পর সাধারণ স্কুলেই গিয়েছে। স্পেশাল স্কুলে তাদের যাওয়ার দরকারই হয়নি। এটা কিছুটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তাই অন্তত ৬ মাস একটু কষ্ট করে সময় দিলেই সারাজীবন উপকৃত হবেন।’

দেখা গেছে, সন্তানের ওপর কাজ শুরু করার আগে বাবা-মায়েদের থেকে তথ্য নেওয়া হয়। এবার অভিভাবক যদি সন্তানকে সঠিকভাবে বুঝেই উঠতে না পেরে ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সঠিক ট্রেনিং দেওয়ার পথে বাধা হয়ে যায়। অ্যাসেসমেন্ট রোল প্লে-র জন্য খুব দরকার এই ক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের সন্তানকে নিয়ে সচ্ছ ধারনা থাকা দরকার। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, ডায়াগনোসিসে সব অটিস্টিক বাচ্চার একই রেজাল্ট আসে না। শিশু ভেদে এগুলি আলাদা হয়। তাই সবার সমাধানও আলাদা। 

 

অটিজম কিওর হয়?
এখানে কিওর হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না কারণ এটা একটা অবস্থা। নিউরো ডাইভার্স থাকার মানে সেই মানুষের সমাজকে বোঝার ক্ষেত্রে, কমিনিকিশনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। আর এই জায়গাতেই ওদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। আমরা চেষ্টা করি,  অটিস্টিক বাচ্চাকে বিভিন্নভাবে স্বনির্ভর করে তোলার। আর এটাই একমাত্র পথ। ওষুধ বা স্টেমসেল স্থাপন কোনও পথ হতে পারে না। 

ডিস্যাবিলিটিতে টেকনোলজি: বিশেষজ্ঞদের কথায়, এখানে পরিকাঠামোগত প্রচুর সমস্যা রয়েছে। কিন্তু টেকনোলজি এ ক্ষেত্রে বিশাল একটা ভূমিকা পালন করে। দেখা যায় কমিনিউনিকেশন ডিভাইস এবং প্রস্থেটিক অফ ল্যাঙ্গুয়েজ দিলে এরা স্বনির্ভরভাবে কমিউনিকেশন করতে পারে। কিন্তু অন্যান্যদের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে রয়েছে এখনও।

‘অটিস্টিক বাচ্চা কামড়ায় খামচায়’ এ কথা সঠিক? 
এখানে সম্পূর্ণ দোষ বাবা-মা বা অভিভাবকদের। কারণ সন্তান সঠিকভাবে  কমিউনিকেট করতে না পারলে বা কথা না শুনলে মারধর করা হয়। এ ক্ষেত্রে সে শিখে যায় আক্রমণ করা। এরপর তার কথায় সাড়া না পেলে সেও একই প্রতিক্রিয়া দিতে থাকে। কারণ সে ভাবে এভাবেই সাড়া মিলবে বা কমিউনিকেট করা যাবে। আগ্রেশন কমাতে তাই তার সন্তানের বেড়ে ওঠার পথেই ব্যবস্থা নিতে হবে। 

বাড়ির বাইরে কীভাবে সামলাবেন এই শিশুদের?
আমরা জানি আমাদের বাচ্চাদের সেন্সর প্রসেসিং ডিসঅর্ডার আছে। এদের ক্ষেত্রে যখন তারা বাইরে যায় সমস্যা তৈরি হয়। শব্দ, গন্ধে সমস্যা বাড়ে। সেগুলোরও সমাধান আছে। যাদের শব্দে সমস্য়া তাদের সাউন্ড ক্যান্সেলিং ইয়ার মাস্ক দিতে হবে। বেরনোর আগে সিডিউল দিয়ে দিন। আগে থেকে বলে দিন কোথায় কোথায় কী হতে চলেছে। সেই মতো ও আগে থেকে প্রস্তুত করবে নিজেকে। যাদের গন্ধে সমস্যা রয়েছে, তাতে স্মেল মাস্ক দিতে হবে। যেই বাচ্চার যে সেন্সর স্ট্রং তাকে সেভাবেই প্রোটেকশ দিয়ে সামলাতে হবে। অনেক বাচ্চার হাতে কোনও অবজেক্ট থাকলে শান্ত থাকে সে। তাই বিভিন্ন স্ট্র্যাটিজি মানতে হবে।

চিকিৎসক অনিমিতা চৌধুরী সাহা (Professor  Of medicine) বলছেন, অটিজিমের এটি কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। পরিবারে কারও বা প্রথম সন্তানের অটিজম বা মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তবুও হবু মায়েরা যেই সাবধানতা মানতে পারেন। কী করবেন? এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ খুব জরুরি। বাবা-মায়ের বয়স বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে। তাই চেষ্টা করতে হবে ৩০-এর আগে গর্ভধারণ করুন। রুবেলা ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে প্রেগন্যান্সির আগে অবশ্যই নিয়ে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্কুলের পঠনপাঠনে অটিজম অ্যাওয়ারনেস থাকা জরুরি ৷  বর্তমানে অনেক স্কুলই সচেতন হয়েছে। স্পেশাল এডুকেটর রাখা হচ্ছে শহরের অনেক স্কুলেই।  অটিস্টিক শিশুরাও সাধারণ স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করে স্বাভাবিক পরিবেশে বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে অন্যান্য দেশের মতো ভারত বা আমাদের রাজ্য এ নিয়ে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। তাই পরিকাঠামোগত উন্নতি জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।

অভিভাবক হওয়া মুখের কথা নয়: বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন সন্তানের অভিভাবকদের প্রায়শই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সমাজের হাজারও চ্যালেঞ্জ সামলে সন্তানকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া সমস্যার হয়ে দাঁড়ায় বহু ক্ষেত্রেই। এমনই একজন মা অমৃতা মুখোপাধ্যায়, ছেলে বুরুণকে নিয়ে দীর্ঘ পথ চলায় রয়েছে তাঁর একাধিক লড়াই। তিনি বলছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বেড়ে না উঠলে সমাজ অন্তর্ভূক্তিমূলক হওয়া অসম্ভব। এর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকেই সকল বাচ্চাদের একসঙ্গে পাঠ নেওয়া উচিত। কিচ্ছু না জানা মানুষ বিভ্রান্ত হন, ঠকেন। এ ক্ষেত্রেও তাইই হচ্ছে। যতক্ষণ না প্রতিটি স্কুলে এই ব্যবস্থা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আমরা তোমরা ভাগটা থাকবেই’।

মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দরকার: বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ভয় বাড়ায়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সমস্যা বাড়ে সন্তান এবং তার বাবা-মায়ের। প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেই। তাই এই দিকটাও নজরে রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের কথায় কারও সন্তান অটিজম শনাক্ত হলে তাঁকে অকারণ সহানুভুতি দেখানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বরং মনোবল বাড়ানো দরকার যাতে পরবর্তী পর্যায়গুলো সে দৃঢ়তার সঙ্গে সামাল দিতে পারে। 

আরও পড়ুন: Gynecological Tips: PCOS বা PCOD মানেই মাতৃত্বের প্রতিবন্ধকতা? কোন পথে সুস্থ ও স্বাভাবিক গর্ভধারণ?

Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )

Calculate The Age Through Age Calculator