লোকসভায় উঠে এল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদাহরণ, সংসদে আত্মপক্ষ সমর্থনে না মহুয়াকে

আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন পেল না মান্যতা। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে বলার সুযোগ দিলেন না স্পিকার ওম বিড়লা। লোকসভার স্পিকার জানান, মহুয়া মৈত্র আগে নিজের বক্তব্য জানাবার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই আর তাঁকে সুযোগ দেওয়া হবে না। এই বলে অতীতের উদাহরণও টানেন স্পিকার ওম বিড়লা। আর অতীতের উদাহরণ টানতে গিয়ে প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম সংসদে ঘুরেফিরে এল কয়েকবার। প্রাক্তন স্পিকারের সিদ্ধান্তকে ঢাল করেই সওয়াল করলেন বর্তমান স্পিকার, সংসদীয় মন্ত্রী, বিজেপির সাংসদরা। আর তাই মহুয়া মৈত্রকে সংসদে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে সওয়াল করল বিজেপি।

এদিকে আজ, শুক্রবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে বলবেন মহুয়া মৈত্র নিজে।’‌ তখনই স্পিকার ওম বিড়লা জানান, লোকসভায় পূর্বসুরীরা যে নিয়ম তৈরি করে গিয়েছেন সে নিয়মই বহাল থাকবে। আগে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও অভিযুক্তদের বলার সুযোগ দেননি। সুতরাং এবারেও মহুয়া মৈত্রকে বলার কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের আর্জিতেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি কৃষ্ণনগরের সাংসদকে। এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে খারিজ হয়ে যায় মহুয়ার সাংসদ পদ।

অন্যদিকে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট আজ পেশ হতেই সংসদে প্রবল বাদানুবাদ শুরু হয়। অধীর চৌধুরী থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা বারবার দাবি করেন, সাংসদের বিরুদ্ধে এমন আচরণ সংসদীয় রীতির বহির্ভূত। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলতে দেওয়া হোক। না হলে ন্যায়বিচার হবে না। মহুয়া মৈত্রকে বলতে দিলে মাথায় বাজ পড়বে না বলেও তোপ দাগেন কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অতীতের কথা তুলে ধরে মহুয়া মৈত্রর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে মহুয়া মৈত্রকে’, তৃণমূলের পাশে দাঁড়াল সিপিএম–কংগ্রেস

আজ বিজেপি সাংসদের বক্তব্যে উঠে আসে প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তখন ১১ সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সে কথা তুলে ধরা হয়। ২০০৫ সালে ওই সাংসদদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বলতে দেওয়া হয়নি বলে সুর চড়ান বিজেপি সাংসদরা। অবশেষে ধ্বনিভোটের মাধ্যমে বহিষ্কৃত হন মহুয়া মৈত্র। বিজেপি সাংসদরা অতীতে সোমনাথবাবু স্পিকার থাকার সময় টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে সংসদের রীতি বহির্ভূত কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠলে তিনি এথিক্স কমিটিতে জানাতে পারেন। সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনে সওয়াল করতে পারেন। কিন্তু সংসদে কিছু বলতে পারেন না। ২০০৫ সালে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগে সোমনাথবাবু রায় দিয়েছিলেন, অভিযুক্ত সাংসদরা একবার এথিক্স কমিটির সামনে বলেছেন। আর কমিটি সাংসদদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য বলে জানিয়েছে। তাই দ্বিতীয়বার সংসদে সওয়াল করার প্রয়োজন নেই। তখনও টাকার বিনিময়ে প্রশ্নে অভিযুক্তদের সংসদে বলতে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কিন্তু সোমনাথবাবু তা খারিজ করে দেন। তখন অভিযুক্ত সাংসদদের মধ্যে বিজেপির ৬জন এবং কংগ্রেসের একজন সাংসদ ছিলেন।