মামলার খরচের ভার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে, রাজ্যপালের ফরমানে তুমুল বিতর্ক

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এবার সেই মামলা লড়ার খরচ চালাতে হবে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রাজভবনের পাঠানো এই সংক্রান্ত নির্দেশিকায় তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মামলা চলছে। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একতরফা অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন আচার্য সিভি আনন্দ বোস। এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। এই মামলার শুনানিতে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠকে বসার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর এই মামলারই খরচ চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজভবনের পক্ষ থেকে।

এদিকে গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠানো হয়। রাজ্যপালের সিনিয়র বিশেষ সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়, আচার্যের নির্দেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। আর তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক লেনদেনের ভার নিতে হবে। সূত্রের খবর, রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে। সেখান থেকে এই তহবিল যাবে রাজভবনে। অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এভাবে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে থাকলে আর্থিক বিধিনিষেধ করা হবে।

অন্যদিকে এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’‌ গত সপ্তাহে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই বৈঠক ভালই হয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করতেই বৈঠকের পরামর্শ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। তার মধ্যেই এবার রাজভবনের নতুন নির্দেশিকা সামনে আসতে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌বিজেপি ক্ষমতার অপব্যবহার করছে’‌, বিডিও’‌র নাক ভাঙার হুমকির জবাব দিল তৃণমূল

এই বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যদের একটি মঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ এডুকেশনিস্টস ফোরাম প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‌কোন আইনি অধিকারে রাজ্যপাল তথা আচার্য এমন ফরমান জারি করেছেন। এই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা এবং বেআইনি ও অনৈতিক। ছাত্র, শিক্ষক শিবিরের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ।’‌ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই ভারপ্রাপ্ত ভিসিরা শুধু দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাবেন। কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। অস্থায়ী ভিসিদের বিশেষ ভাতা, সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হবে না। এই মামলায় রাজ্যের সঙ্গে লড়াই চলছে রাজ্যপালের। এবার তাঁর নিযুক্ত ভিসিদেরই রাজভবন থেকে মামলার জন্য টাকা জমা করার ফতোয়া দেওয়ায় রাজ্যপালকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে এডুকেশনিস্ট ফোরাম।