আপিল করে নির্বাচনে ফিরলেন ২৮০ প্রার্থী

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করে ভোটের মাঠে ফিরলেন ২৮০ জন প্রার্থী। অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর আপিলে ভোটের মাঠ থেকে ছিটকে গেলেন ৫ প্রার্থী। ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ের পরে প্রার্থী বাড়লো ২৭৫ জন। সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন করে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ালো দুই হাজার ২৬০ জনে। উচ্চ আদালতে আপিলে এই সংখ্যা কিছুটা কম বেশি হতে পারে। এছাড়া আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর এই সংখ্যা আরও কিছুটা কমতে পারে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত রূপ নেবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ২৭ শতাংশ। আর বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ বা ৭৩ শতাংশ। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল জমা পড়েছিল ৫৬০টি। এর মধ্যে ৩৫টি আপিল ছিল বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে। এর মধ্যে দু-একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক আপিল জমা পড়ে। বাকি ৬২৫টি আপিল হয় প্রার্থিতা ফেরত পেতে।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন টানা ছয়দিন এসব আপিল শুনানি করেছে। ৫৬০টি আবেদনের মধ্যে ২৮৫টি মঞ্জুর করে কমিশন। বাকি ২৭৫টি আবেদন নাকচ হয়। মঞ্জুর হওয়া আপিলের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে অবৈধ হওয়া ২৮০ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। অপরদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণা করেছেন এমন ৫ প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা হারিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আপিলে।

৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে এর মধ্যে চারজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। তারা হলেন- বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মো. নাসিরুল ইসলাম খান, নোয়াখালী-৩ আসনের মামুনুর রশীদ কিরণ ও কক্সবাজার-১ আসনের মো. সালাহ উদ্দীন আহমেদ। এদের সকলেই প্রার্থিতা ফেরত পেতে আপিল করলেও মঞ্জুর হয় নাসিরুল ইসলাম খান ও মামুনুর রশীদ কিরণের। এতে করে শাম্মী আহমেদ ও মো. সালাহ উদ্দীন আহমেদ তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার সিদ্ধান্তে বৈধ ঘোষণা করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী (বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে) প্রার্থীর আপিলে প্রার্থিতা হারান ৫ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত যশোর-৪ আসনের এনামুল হক বাবুল, ময়মনসিংহ-৯ আসনের আব্দুস সালাম ও ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক। স্বতন্ত্র বৈধ প্রার্থী বাতিল হয়েছে- বরিশাল-৫ আসনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন।

নির্বাচন কমিশন তার আপিল শুনানির শেষ দিন শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) ৮৪টি আপিল নিষ্পত্তি করে। এর মধ্যে ২২টি আপিল মঞ্জুর হয়েছে। এতে প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন ২০ জন। পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর হওয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত একজনসহ দুইজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। এদিন মধ্যে নাকচ হয় ৬২টি আপিল।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) পঞ্চম দিনে ৯৬টি আপিল নিষ্পত্তি করে ইসি। এদিন শুনানিতে আপিল মঞ্জুর হয় ৪৪টি ও ৫২টি আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) চতুর্থ দিনে ১০১টি আপিল শুনানিতে মঞ্জুর হয় ৪৮টি। আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৫৩টি। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনে ৯৯টি আপিল শুনানিতে মঞ্জুর হয় ৬৪টি। আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৩৫টি। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ৯২টি আপিল শুনানিতে মঞ্জুর হয় ৫১টি। আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৪১টি। রবিবার (১০ ডিসেম্বর) প্রথম দিনে ৮৮টি আপিল শুনানিতে মঞ্জুর হয় ৫৬টি। আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৩২টি। 

গত ৫ দিনে যে ২৭৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তাদের ১২২ জনই স্বতন্ত্র। এছাড়া আওয়ামী লীগের ২ জন ও জাতীয় পার্টির ১৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির ১৭ জন ও বিএনএম’র ৭ জন আপিলে বৈধ প্রার্থী হিসাবে ইসির রায় পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ৩ হাজার ৬৫। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ৭৮৬টি। নির্বাচন কমিশনের আপিলে সেখান থেকে বৈধতা পায় ২৪১ জন।