মৎস্যজীবীকে টেনে নিয়ে জঙ্গলে গেল বাঘ, সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মৃত্যু

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে জীবন–জীবিকা বলতে, মাছ ধরা, কাঁকড়া ধরা, মীন সংগ্রহ এবং মধু সংগ্রহ করা। আর এই কাজ করতে গিয়ে মানুষজনকে বাঘের শিকার হতে হয়। ফলে মৃত্যু হয় মৎস্যজীবী থেকে সাধারণ মানুষের। কত মানুষ যে বাঘের পেটে গিয়েছে তার সংখ্যা অজানা। এবারও সেই একই ঘটনা ঘটল। খাড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় প্রাণ গেল সুন্দরবনের এক মৎস্যজীবীর। ঝড়খালির হেড়ো ভাঙা নদীর জঙ্গলে এমন ঘটনা ঘটেছে। মৃতের নাম সুশান্ত প্রামাণিক। ঝড়খালি কোস্টাল থানার পুলিশ ওই মৎস্যজীবীর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় সুত্রে খবর, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সুশান্ত তাঁর তিন প্রতিবেশী বন্ধু সুব্রত ডাকুয়া, বাবুলাল মণ্ডল এবং নিশিকান্ত মণ্ডলকে নিয়ে ২ নম্বর নেহেরু পল্লি এলাকার বাড়ি থেকে সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতে রওনা দেন কাঁকড়া ধরার জন্য। ওই মৎস্যজীবীর দল হেড়োভাঙার জঙ্গল লাগোয়া নদীতে জাল পাতছিলেন। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছিল। নৌকায় তখন চার মৎস্যজীবী। তখন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে সুশান্তকে ঘাড়ে থাবা বসিয়ে সকলের সামনে থেকে টেনে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এদিকে ঘাপটি মেরে বসেছিল বাঘ। একেবারে শান্ত হয়ে সুশান্তদের নিশানা করেছিল। যা টের পাননি সুশান্তরা। জঙ্গলের আড়াল থেকে তাঁদের প্রত্যেক মুহূর্তে নজরে রেখেছিল সে। ঠিক সময়ে দিল ঝাঁপ। একেবারে সরাসরি কোপ বসাল সুশান্তর ঘাড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টেনে নিয়ে যেতে লাগল গভীর জঙ্গলে। তখন গাছের ডাল ভেঙে বাঘের পিছু ধাওয়া করে সুব্রত ডাকুয়া, বাবুলাল মণ্ডল এবং নিশিকান্ত মণ্ডলরা। সঙ্গীকে বাঘের কবল থেকে উদ্ধার করা ছিল একমাত্র লক্ষ্য। টানটান উত্তেজনায় চলে বাঘের সঙ্গে মানুষের লড়াই। ক্ষুধার্ত শীতের বাঘ শিকার ছাড়তে নারাজ। তাই বাধা পেয়ে তিনজনকে আক্রমণ করল দক্ষিণরায়। কিন্তু একসঙ্গে তিনজন রুখে দাঁড়ানোয় রণে ভঙ্গ দেয় বাঘ মামা। আর ঢুকে যায় গভীর জঙ্গলে।

আরও পড়ুন:‌ গত পাঁচ বছরে হাজারের বেশি ট্রেন চালককে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, জানালেন রেলমন্ত্রী

অন্যদিকে বাঘের মুখ থেকে সুশান্তকে ফিরিয়ে আনতে সফলও হন তাঁরা। কিন্তু তখন সব শেষ। রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গলে পড়ে যান সুশান্ত। বাঘ পালিয়ে যেতেই তাঁকে উদ্ধার করে ঝড়খালিতে ফিরিয়ে আনা হয়। খবর দেওয়া হয় ঝড়খালি কোস্টার থানায়। পুলিশ দেহটি আজ, শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য বাসন্তী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর। সুশান্তর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর নেহরু পল্লি এলাকায় পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে মৃতের পরিবার।