জিএম কাদেরকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারানোর ঘোষণা নৌকার প্রার্থীর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারানোর ঘোষণা দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী তুষার কান্তি মণ্ডল। নৌকার মনোনয়ন পাওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগের হারানো এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই।’

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ঘোষণা আমলে নিচ্ছেন না জাতীয় পার্টির রংপুরের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন লুৎফা ডালিয়া। তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফিজার রহমান মোস্তফার কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে জামানত হারিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শনিবার তুষার কান্তি মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রংপুর একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল। কিন্তু গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন, তার প্রতিফলন হিসেবে এবার নৌকাকে জয়ী করবে এখানকার মানুষ। রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা, মেরিন একাডেমি স্থাপন, সিটি করপোরেশনসহ এমন কোনও সেক্টর নেই; যেখানে উন্নয়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। ফলে জাতীয় পার্টির দুর্গে ফাটল ধরেছে। তাদের থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নৌকার গণজোয়ার শুরু হয়ে গেছে।’ 

এই আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পর থেকে সর্বস্তরের মানুষের উচ্ছ্বাস দেখছি, অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি উল্লেখ করে তুষার কান্তি বলেন, ‘মানুষের সাড়া দেখে উপলব্ধি করতে পারছি, কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম কাদেরকে পরাজিত করতে পারবো।’ 

তিন বছর ধরে আমার আসনের প্রতি পাড়া-মহল্লা, এমনকি বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ করেছি দাবি করে নৌকার  এই প্রার্থী বলেন, ‘ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জিএম কাদেরকে পরাজিত করার ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম। জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।’

তবে তুষার কান্তির ওপেন চ্যালেঞ্জকে ‘স্টান্টবাজি’ বলছেন জাপা চেয়ারম্যানের একান্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দলের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। তিনি বলেন, ‘স্টান্টবাজি করে আলোচনায় থাকার অপকৌশল এটি। তুষার কান্তি হয়তো ভুলে গেছেন, অল্প কিছুদিন আগে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী। শুধু তাই নয়, ওই প্রার্থী নিজের বাড়ির আশপাশের ৩০টি কেন্দ্রে কোনও ভোট পাননি। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এরপর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কমিটির মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তুষার কান্তি, আলোচনায় থাকার জন্য আজেবাজে কথা বলছেন।’

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পায়ের তলায় মাটি আছে কিনা সন্দেহ আছে। যিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দলীয় মেয়র প্রার্থীর জামানত রক্ষা করতে পারেননি, উল্টো নেতৃত্ব হারিয়েছেন; তিনি হারাবেন জাপা চেয়ারম্যানকে—অসম্ভব। রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল, আছে এবং থাকবে। বিপুল ভোটে জয়ী হবেন আমাদের চেয়ারম্যান।’

এবার রওশন এরশাদপন্থি দুই সংসদ সদস্য রংপুরে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাননি। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই লড়ছেন। অন্যদিকে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে মনোনয়ন পাননি দলের বহিষ্কৃত নেতা ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা। এই আসনে জিএম কাদেরের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার মনোনয়ন পেয়েছেন।

রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও আরও সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন—জাকের পার্টির লায়লা আঞ্জুমান আরা বেগম, জাসদের সহিদুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক, তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম রাকিবুল বাশার।