সাজেকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ পর্যটক, স্থানীয়দের বাড়িতে অনেকের অবস্থান

মহান বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে (রুইলুই ভ্যালি) পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ইতোমধ্যে সব রিসোর্ট-কটেজের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শুক্রবার অনেকে রাত কাটিয়েছেন স্থানীয়দের ঘরে, রিসোর্ট-কটেজের স্টোররুম ও বারান্দায়। আবার জায়গা না পেয়ে ফিরে গেছেন কেউ কেউ।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ও শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের ছুটির থাকায় কয়েক হাজার পর্যটক সাজেকে বেড়াতে আসেন। তাদের সংখ্যা রিসোর্ট-কটেজের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় কক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। আজও এখানে তিন হাজার পর্যটক রয়েছেন।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতি জানায়, সমিতির আওতায় ১২০টি রিসোর্ট-কটেজ আছে। এগুলোর ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের। কিন্তু শুক্রবার চার হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন। এজন্য কক্ষ সংকট দেখা দেয়। এবার ছুটি শুরু হওয়ার চার দিন আগেই সব রিসোর্ট-কটেজের কক্ষ বুকিং হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার যারা কক্ষ পাননি তাদের স্থানীয় মানুষের বাড়ি, রিসোর্ট-কটেজের বারান্দায় থাকতে দেওয়া হয়েছিল। কক্ষ না পেয়ে শনিবার বিকালে ফিরে গেছেন শতাধিক পর্যটক। অতিরিক্ত যারা আছেন তাদের কেউ স্বজনদের বাড়িতে, আবার অনেকে স্থানীয়দের ঘরে, কেউ কেউ রিসোর্ট-কটেজের স্টোররুম ও বারান্দায় অবস্থান করছেন।

পর্যটকরা বলছেন, শীতে রাঙামাটির রুইলুই ভ্যালিতে প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ হয়ে ওঠে। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির চূড়া থেকে দেখলে নিচের মেঘ ও কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়গুলোকে শুভ্র সমুদ্রের মতো মনে হয়। সুন্দর মুহূর্ত দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। এর মধ্যে বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় দেখা দেয় কক্ষ সংকট। 

শুক্রবার ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ পর্যটক সাজেকে এসেছেন বলে জানালেন জুমঘর ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক ইয়ারং ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘তবে কাউকে রাস্তায় রাত কাটাতে হয়নি। অনেকে শনিবার ফেরত গেছেন। তবে শুক্রবারের তুলনায় শনিবার পর্যটক কম। বেশি পর্যটক আসায় রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ক্লাবঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেকে রিসোর্ট-কটেজের বারান্দায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। বর্তমানে সাজেকে তিন হাজারের মতো পর্যটক আছেন।’

সাজেক জিপ মালিক সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘শুক্রবার ৩৪০টির মতো জিপ, ১০০টির মতো সিএনজি অটোরিকশা এবং প্রায় ১০০টির মতো বাইকে করে সাজেকে এসেছেন পর্যটকরা। হিসাবে কয়েক হাজার পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। তবে শনিবার পর্যটক কম এসেছেন। প্রায় ৫০টির মতো জিপ এবং ২০টির মতো বাইকে পর্যটকরা এসেছেন। যা এসেছেন তার চেয়ে বেশি ফেরত গেছেন আজ।’

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চাকমা জন বলেন, ‘শুক্রবারের ছুটিতে অন্তত চার হাজার পর্যটক সাজেকে এসেছেন। তাই সমিতির রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ সংকট ছিল। যেসব পর্যটক আগাম বুকিং না দিয়ে এসেছেন, তারা সমস্যায় পড়েছেন। যারা কক্ষ পাননি তাদের জন্য আমরা সমিতির পক্ষ থেকে ক্লাবঘরে এবং আশপাশের স্থানীয়দের বাসা বাড়িতে রাতযাপনের ব্যবস্থা করেছি।’

আমাদের সমিতির আওতায় সাজেকে ১২০টির মতো রিসোর্ট-কটেজ আছে উল্লেখ করে রাহুল চাকমা আরও বলেন, ‘এসব রিসোর্ট-কটেজে পর্যটক ধারণক্ষমতা এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার সর্বোচ্চ। কিন্তু সাজেকে এখনও তিন হাজারের মতো পর্যটক রয়েছেন। অতিরিক্ত পর্যটকদের সামাল দিতে সমিতির পক্ষ থেকে রিসোর্ট-কটেজের বারান্দায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছি আমরা।’