সরিষাবাড়ীতে থানা হাজতে আসামির মৃত্যু  

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে এক আসামিকে গত মঙ্গলবার বিকালে গ্রেফতার করে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ। মধ্যরাতে থানা হাজতে সেই আসামি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মৃত সেই আসামির নাম আনোয়ার হোসেন (৪৫)। তার বাড়ি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুস সামাদ দুলুর ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের পিতা ছিলেন।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে আনোয়ার হেসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডোয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, মঙ্গলবার বিকালে মারামারির মামলায় আসামি আনোয়ার হোসেনকে তার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে রাতে থানা হাজতে রাখা হয়। মধ্যরাতে হঠাৎ তিনি থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্ত্রী আলপনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ সুস্থ মানুষ ধরে নিয়ে গেছে। থানার নেওয়ার পর সবশেষ সন্ধ্যায় তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়, তখনও তার স্বামী ভালো ছিলেন। রাত ১২টায় হঠাৎ খবর আসে যে, তার স্বামী স্ট্রোক করেছে।’

নিহত আনোয়ার হোসেনের মামা আলহাজ ফকির বলেন, ‘পুলিশ সুস্থ অবস্থায় আনোয়ারকে ধরে নিয়ে গেলো। আর এমন কী হলো যে, সে রাতেই মারা গেলো?’

আনোয়ার হোসেনের বোন নুরজাহান বেগম অভিযোগ করেন, তার ভাই সুস্থ ছিল, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে, তাই তিনি মারা গেছেন। ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মেহেদি হাসান জানান, আনোয়ার হোসেনকে হাসপাতালে আনার পর অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং ইসিজি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পর তাকে জীবিত পাওয়া যায়নি। তাকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডোয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন জানান, আনোয়ার হোসেনের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি পুলিশ তাকে জানিয়েছিল। তৎক্ষণাৎ তিনি হাসপাতালে গিয়ে আনোয়ার হোসেনের নিথর দেহ দেখতে পান।

এ ব্যাপারে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শহিদুর রহমান জানান, দোলভিটি গ্রামের ফিরোজ মিয়ার সাথে গত ১০ ডিসেম্বর চাপারকোনা বাজারে আনোয়ার হোসেনের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনায় ফিরোজের ভাই সোহেল রানা বাদি হয়ে ২৫ ডিসেম্বর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আনোয়ার আসামি ছিলেন। মঙ্গলবার বিকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়, রাত ১২টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তবে পরিবারের হত্যার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, আনোয়ারকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পরিবারের লোকজন সঙ্গেই ছিল।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘হাজতি আনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার মধ্য রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সে মারা যায়।’