Supreme Court on Adani-Hindenburg Row: ‘হিন্ডেনবার্গের মতো রিপোর্টের ভিত্তিতে…’, আদানি মামলায় যা বলল শীর্ষ আদালত

আদানিকাণ্ডে সেবি তদন্ত নিয়ে আজ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের আজকের রায়তে অনেকটাই স্বস্তি পেল আদানি গোষ্ঠী। এই নিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কী কী বলল? আজকে এই মামলায় রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, সেবির এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট নিজের পর্যবেক্ষণে এও বলে, ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের মতো কোনও রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পৃথক তদন্ত করা যায় না।’ এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলে, আইন মেনে সেবি নিজের মতো তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেবি যে তদন্তে গাফিলতি করেছে, এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়নি। (আরও পড়ুন: ‘ভারতের বৃদ্ধির পথে অবদান জারি থাকবে’, সেবি তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম রায়ের পর বললেন আদানি)

এর আগে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছিল, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অফ ইন্ডিয়াকে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে বলা যায় না। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, মিডিয়ায় যা প্রকাশিত হয়েছে, সেটা ধ্রুবসত্য বলে বিবেচনা করার কোনও কারণ নেই। উল্লেখ্য, শেয়ারের দাম হেরফের সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে সম্প্রতি একটি হলফনামা পেশ করেছিলেন সেই হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, সেবি এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। শুধু তাই নয়, আবেদনকারীর আরও দাবি, ডিরেক্টোরেট অফ রেভিন্যু ইন্টেলিজেন্সের থেকে আদানি সংক্রান্ত তথ্যের পাওয়ার পরও কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ঘুমাচ্ছিল সেবি। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টকে পদক্ষেপ করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল আবেদনে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট পেশ করা হলফনামায় মামলাকারী অনামিকা জয়সওয়ল দাবি করেছিলেন, গত ২০১৪ সালে তৎকালীন সেবি চেয়ারপার্সনের কাছে আদানিকে নিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল ডিরেক্টোরেট অফ রেভিন্যু ইন্টেলিজেন্স। সেই চিঠিতেই সেবিকে সতর্ক করা হয়েছিল যে আদানি হয়ত বেআইনি ভাবে তাদের শেয়ার দর হেরফের করছে। বেশ কিছু সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বেশি খরচ দেখিয়ে সেই টাকা দিয়েই শেয়ারের দামে হেরফের করা হচ্ছিল বলে নাকি লেখা ছিল চিঠিতে। হলফনামা অনুযায়ী, ডিরেক্টোরেট অফ রেভিন্যু ইন্টেলিজেন্সের তরফে সেবিকে সেই চিঠির সঙ্গে দু’টি নোট এবং একটি সিডি পাঠানো হয়েছিল। তাতে আদানির ২৩২৩ কোটির দুর্নীতির প্রমাণ ছিল। এদিকে মামলাকারীর দাবি, এই নিয়ে ডিরেক্টোরেট অফ রেভিন্যু ইন্টেলিজেন্সের মুম্বই জোনের অফিস থেকে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এই আবহে মামলাকারীর অভিযোগ, আদানি কাণ্ডে সেবির এই তদন্ত স্বার্থের সংঘাতের সামিল।

হলফানামায় আরও অভিযোগ করা হয়েছিল, সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাসের ম্যানেজিং পার্টনার সিরিল শ্রফ সেবির সদস্য। তিনি এই ধরনের ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’-এর তদন্তের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে আছেন। আর তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে গৌতম আদানির ছেলের সঙ্গে। এদিকে হলফনামায় মরিশাসের দু’টি সংস্থার উল্লেখ করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, সেই দুই সংস্থা সেবির সন্দেহভাজনের তালিকায় আছে। আর এই সংস্থাগুলি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আদানির বিপুল সংখ্যক শেয়ার কেনা-বেচা করেছে। তবে এই সংস্থার আসল মাথাকে সেবি আজও চিহ্নিত করতে পারেনি। হলফনামায় আরও অভিযোগ ছিল, সেবির অনেক নিয়ম পরিবর্তনে লাভবান হয়েছে আদানি।

প্রসঙ্গত, আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশের পরই তুলকালাম কাণ্ড হয়েছিল দেশের বাণিজ্য মহলে। ধস নেমেছিল আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। এই পরিস্থিতিতে আদানিদের মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। প্রসঙ্গত, হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, বিদেশে বেনামি সংস্থা খুলে নিজেদের শেয়ার নিজেরাই কিনে নিত আদানি গোষ্ঠী। এভাবে বাজারে ভুয়ো চাহিদা সৃষ্টি করে শেয়ারের দাম চড়ানো হত। যদিও এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে এসেছে আদানি গোষ্ঠী। উলটে তাদের অভিযোগ ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার ‘মিথ্যা’ রিপোর্টের মাধ্যমে কোম্পানিকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে।