হাইকোর্ট সিঙুরের চাষিরা, মমতা সরকারকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে অবস্থান

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের ভিত্তিভূমি সিঙুরে জমি ফেরত নিয়ে কৃষকের দায়ের করা মামলায় আদালতে অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। সিঙুরে জমি ফেরত নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান কী তা হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবহজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ ৪ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জমি এখনও ফেরত না দেওয়ার করাণ জানাতে বলেছে। আদালতের এই নির্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি নতুন করে বাড়ল।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সিঙুরে বহু কৃষককে এখনো জমি ফেরত দেয়নি মমতার সরকার। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট জমি আগের অবস্থায় এনে ফেরত দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশও সব ক্ষেত্রে মানা হয়নি। যারা জমি ফেরত পেয়েছেন তার অধিকাংশই চাষযোগ্য নয়। মামলাকারীদের আরও অভিযোগ, এই নিয়ে বহু বার রাজ্য সরকারকে আবেদন করলেও কাজ হয়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।

প্রায় ১ দশকের লড়াইয়ের পর ২০১৬ সালে রাজ্য সরকারকে সিঙুরে টাটার গাড়ি কারখানার জন্য বরাদ্দ জমি চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পর সিঙুরে গিয়ে সরষে ছড়িয়ে চাষের সূচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সিঙুরের ৯৯৭ একর জমির মধ্যে অধিকাংশই পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কারখানার নির্মাণকাজের জেরে জমির চরিত্র বদলে যাওয়ায় চাষ লাভজনক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

এই অবস্থায় গত অক্টোবরে সিঙুরের জমি থেকে টাটাদের উৎখাত করার জন্য রাজ্য সরকারকে ৭৬৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে নির্দেশ দেন বিচারক। সেই নির্দেশের জেরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল মমতার সরকারকে। সেই অস্বস্তি মিটতে না মিটতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মেনে জমি ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ তুললেন খোদ সিঙুরের চাষিরা। সঙ্গে জমি চাষযোগ্য না করেই ফেরত দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তাঁরা।

লোকসভা ভোটের মুখে সিঙুর নিয়ে রাজ্য সরকার আদালতে কী জবাব দেয় সেদিকে নজর থাকবে সবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিঙুর নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাপের ছুঁচো গেলার দশা হয়েছে। জঙ্গি আন্দোলন করে টাটাদের তাড়ানোর ফল এখন বুঝতে পারছেন তৃণমূলনেত্রী। সিঙুরের শিল্পায়নের অঙ্কুর বিনাশের দায় যেমন বর্তেছে তাঁর ওপর। তেমনই মমতার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের সরব হয়েছেন স্থানীয়রা।