মহিলাদের কি স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে? ৫টি কারণকে দুষছেন চিকিৎসকরা

সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলি থেকে উঠে এসেছে যে মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা কম বয়সের পুরুষদের তুলনায় বেশি কিন্তু পরবর্তীতে, মধ্যবয়সী মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোকের প্রবণতা বেশি। সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুর গ্লেনিগেলস হাসপাতালের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট ডাঃ ক্রান্তি মোহন, এইচটি লাইফস্টাইলের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনাগুলির পার্থক্য কম হয় কারণ পোস্টমেনোপজাল জনিত ঘটনা মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখ যায়। তিনি আরও বলেন, মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনা পুরুষদের তুলনায় কাছাকাছি বা এমনকি বেশি। এটি সাধারণত বিবেচনা করা হয় যে স্ট্রোকের LTR পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি, প্রধানত মহিলাদের দীর্ঘ আয়ু হওয়ার কারণে এই ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।

ডাঃ ক্রান্তি মোহন, মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণগুলি তুলে ধরেছেন যেগুলি নিন্মরুপ।

১. গর্ভাবস্থার সময়কাল: গর্ভাবস্থা এবং প্রসব পরবর্তী সময়ের জন্য অনন্য অবস্থা যেমন অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এমবোলিজম, প্রসবোত্তর এনজিওপ্যাথি এবং প্রসবোত্তর কার্ডিওমায়োপ্যাথিও স্ট্রোকের জন্য। বিভিন্ন ভাস্কুলোপ্যাথি মায়েদের স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। রিভার্সিবল সেরিব্রাল ভাসোকনস্ট্রিকশন সিন্ড্রোম (RCVS) হল মাতৃত্বকালীন স্ট্রোকের একটি প্রচলিত কারণ, এবং এটি সাধারণত প্রসবের পরে বিকাশ লাভ করে। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবোত্তর সময়কালে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের পাঁচগুণ বেশি ঝুঁকির কারণে, পেটেন্ট ফোরামেন ওভেল (পিএফও) এর মাধ্যমে প্যারাডক্সিক্যাল এমবোলিজম এম্বোলিক স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

২. গর্ভনিরোধক বড়ি (OCPs): গর্ভনিরোধক বড়ির ব্যবহার এক্সোজেনাস ইস্ট্রোজেন স্ট্রোকের ঝুঁকির জন্যে দায়ী। বর্তমান ওসিপি ব্যবহার করা মহিলাদের মধ্যে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি ২.৫ গুণ এবং হেমোরেজিক স্ট্রোকের ঝুঁকি ১.৪ গুণ বেড়ে যায়৷ ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. লাইফটাইম এন্ডোজেনাস ইস্ট্রোজেন এক্সপোজার: মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রজনন জীবনকাল স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীদের প্রজনন জীবনকাল ৩০ বছরের কম তাদের ৩৬-৩৮ বছরের প্রজনন জীবনকালের তুলনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ বেশি। ১৩ বছর বয়সে মেনার্চে আক্রান্ত মহিলাদের সাথে তুলনা করে দেখ গিয়েছে যাদের ঋতুস্রাবের প্রথম দিকে (≤১০ বছর) এবং দেরিতে ঋতুস্রাব (≥১৬ বছর) শেষ হয়, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি যথাক্রমে ২৭ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেনোপজের সময় ৫০-৫১ বছর বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যাদের অকাল মেনোপজ (<৪০ বছর) এবং প্রারম্ভিক মেনোপজ (৪০-৪৪ বছর) তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি যথাক্রমে ৯৮ শতাংশ এবং ৪৯ শতাংশ বেশি ছিল।

৪. অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন: পুরুষদের মধ্যে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের প্রাদুর্ভাব বেশি, কিন্তু অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি মহিলাদের মধ্যে বেশি।

৫. মাইগ্রেন: যাদের মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি, তাঁদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই মাইগ্রেনে বেশি ভোগেন। মাইগ্রেন, বিশেষ করে ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। মাইগ্রেনের তিনটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল মাথাব্যথার আগে দৃষ্টিসমস্যা (যেমন-ব্লাইন্ড স্পট বা ফ্লাশ লাইট দেখা), আলো সহ্য করতে না পারা ও বমিভাব। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে মাইগ্রেন প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করতে হবে।