‘সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে প্রেমিকা আত্নহত্যার হুমকি দেয়’

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৩ বছর। পড়াশোনা করছি। একটা প্রেমের সম্পর্কে আছি, কিন্তু মানসিকভাবে নানা ধরনের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। সে আমাকে কথায় কথায় ব্ল্যাকমেইল করে। সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে প্রেমিকা আত্নহত্যার হুমকি দেয়। পড়াশোনায় একদম মনোযোগ দিতে পারছি না। ভয়ে ব্রেকআপও করতে পারছি না। কারণ আসলেই আত্নহত্যা করে ফেলতে পারে সে। কী করবো?

উত্তর: আপনার প্রেমিকার আচরণের ব্যাপারে আপনার সহনশীলতা এবং তার প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসা আছে বলেই আপনাদের সম্পর্ক এখনও টিকে আছে। আপনাদের একে অপরের প্রতি আচরণ বা স্বভাবধর্ম পরিবর্তনের চেষ্টার করার আগে আপনাদেরকে এটা বুঝতে হবে যে, আপনাদের একজনের কাছে অন্যের যে স্বভাব অস্বাভাবিক, তার জন্য সেটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আমরা চাইলেই আমাদের বা অন্যদের স্বভাবধর্ম রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবো না। পরিবর্তন হওয়ার থাকলে তা এমনিতেই হবে, আমরা চাই বা না চাই, চেষ্টা করি বা না করি। অনুরূপ, পরিবর্তন না হওয়ার হলে শত চেষ্টা করেও লাভ হবে না। সুতরাং সবকিছুকে যেমন আছে ঠিক তেমনভাবে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করাটা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত এবং স্বস্তিদায়কও বটে। আপনার প্রেমিকার তথাকথিত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয়তো আপনি তাকে ভালোবাসেন। আমরা আমাদের সকল আচরণ বা অনুভূতির অন্তর্নিহিত কারণ আমরা নিজেরাও সবসময় জানি না। আর সম্পর্ক রাখা না রাখার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ থাকার অর্থ হচ্ছে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। যখন সময় আসবে, স্থায়ী সিদ্ধান্ত আপনাআপনি আপনার ভেতর থেকে উঠে আসবে, সক্রিয় চেষ্টা ছাড়াই।

প্রশ্ন: আমি নতুন কোনও পরিবেশে সহজে খাপ খাওয়াতে পারি না। অপরিচিত কারোর মধ্যে যেতে হবে এই ভয়ে ভালো চাকরি পেলেও জয়েন করি না। কোনও দাওয়াতে যাই না। কীভাবে এই সমস্যা দূর করবো?

উত্তর: আপনার বর্ণিত অবস্থা সামাজিক আশঙ্কা বা আতঙ্কের (সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা সোশ্যাল ফোবিয়া) কারণে হয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পারেন-

১। ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার স্ট্রেস রিঅ্যাকশনকে সংহত করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাসটাকে ফুসফুসে ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশীগুলো যতোটুকু সম্ভব ভেতরের দিকে টেনে ধরে রাখুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।

২। নিজের সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নেওয়া: নিজের মধ্যে আসা সব ধরনের আবেগ অনুভূতিকে মেনে নিন। নিজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল অনুভূতি, আচরণ, চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যকে সমানভাবে মেনে নিন। আপনার দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়ে তাকেও মেনে নিন। এভাবে চর্চা করতে থাকলে আপনি একসময় অহেতুক দুশ্চিন্তাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে পারবেন এবং আপনার ভেতরে ধীরে ধীরে একটা প্রশান্তি চলে আসবে। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতাকে মেনে নিন। এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে না মেনে নেওয়ার মতো কিছুই আপনার কাছে থাকবে না।

৩। সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন: বেশি সময় ধরে মানুষের সংস্পর্শে থাকুন, তাদেরকে সাথে মনের ভাব বিনিময় করুন, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করুন।এসবের মাধ্যমে আপনার সামাজিক দক্ষতা বাড়তে থাকবে।