বিস্মৃতির আঁধারে সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদারের শহীদ দিবস, ফিরে দেখা ইতিহাস

‘হিন্দু না ওরা মুসলিম, ওই জিজ্ঞাসা কোন জন/ কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র’ – কাজী নজরুলের কবিতা ধার করে বলতে হয় এমনই দুই কান্ডারীর শহীদ দিবস আজ। কয়েক দিন আগেই কেটে যাওয়া ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ সালে জাতীয় যুব দিবস উদযাপনের অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদারের শহীদ দিবস। ঠিক ৯০ বছর আগে ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাত্রি ১২:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের কারাগারে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের বেশিরভাগ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ সরকার। সূর্য সেন আর অম্বিকা চক্রবর্তী শহরে দেওয়ানবাজার পুকুর পাড়ে শান্তি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। যার আড়ালেই বিপ্লবী দল গোছানোর চেষ্টা শুরু তাদের। পরে সূর্য সেন যুগান্তর দলের সভাপতি হন। ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, সূর্য সেন এবং তার দলের অন্যান্য সদস্যরা সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, আর আন্দোলনের গুরু ভার কাঁধে নেন মাস্টারদা সূর্যসেন। চট্টগ্রামের উমাতারা স্কুলের শিক্ষক বিপ্লবী কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত করেন চট্টগ্রামের শত-শত যুবকযুবতীকে।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, গণেশ ঘোষ এরকম অসংখ্য নাম পরবর্তী ইতিহাসকে উজ্জ্বল করে তোলে। ব্রিটিশদের বিপরীতে গড়ে তোলে দুর্বার প্রতিরোধ। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ব্রিটিশ বাহিনীর ৮০ জন মারা যায়, শহীদ হন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সহ ১২ জন বিপ্লবী। সাথী হারানোর শোক ভুলে বিপ্লবী লড়াই জারি থাকে। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সূর্য সেন। স্বভাবতই মাস্টারদাকে ফাঁসির আদেশ দেয় ব্রিটিশ শাসক।

সূর্য সেনের গ্রেফতারির পর তারকেশ্বর দোস্তিদার দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৩৩ সালের ৮ মে গ্রেফতার হন তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্ত। কল্পনা দত্ত শেষ পর্যন্ত ছাড়া পেলেও তারকেশ্বর দস্তিদার আর সূর্য সেনের ফাঁসি আটকানো যায়নি। ব্রিটিশ শাসকের এতটাই ভয়ে ধরিয়েছিল এই দুই বিপ্লবী, ফাঁসির পর তাদের মৃতদেহগুলি বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে ফেলে দেওয়া হয় শরীরের লোহার টুকরো বেঁধে। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের কাছে মাস্টারদা দিয়ে যান তার স্বপ্ন, সংগ্রামের উত্তরাধিকার। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য যা রেখে গেলাম, তা হলে আমার সোনালি স্বপ্ন, স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো। সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’ আজ এমনই দুই মহান বিপ্লবীর শহীদ দিবস, যাদের ইতিহাস ভোলার নয়, যে সোনালি স্বপ্ন আজও টিমটিম করে জ্বলছে…