Architect of Ram Mandir: বাবা রূপ দিয়েছিলেন সোমনাথ মন্দিরের, ছেলের ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ অযোধ্যার রামমন্দির

অযোধ্যায় উদ্বোধন হতে চলেছে, এটি কয়েক দশকের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং ভক্তির ফল।  প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে ভগবান রামচন্দ্রের ‘তাঁর’ নবনির্মমিত মন্দিরে। ২২ জানুয়ারি হল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মন্দিরটি তার নকশা ও কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতের বৃহত্তম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মন্দির হতে চলেছে৷ এদিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে অযোধ্যারও পুনর্জন্ম ঘটতে চলেছে বলে দাবি করছেন ভক্তরা। অযোধ্যা হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান। কারণ রাম চন্দ্র অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা। তাই তাঁর জন্মস্থানে অবস্থিত মন্দিরটিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জানেন ‘কে’ এই মন্দিরের নকশার পেছনে? ‘কার’ ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ অযোধ্যার এই রামমন্দির? তিনি হলেন, চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। ভারতের বিখ্যাত এই স্থপতির নকশা ধরেই চলছে অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের কাজ। নকশা তৈরির ৩৪ বছর পর স্বপ্নপূরণ হচ্ছে তাঁর।

সোমপুরা গুজরাটের আহমেদাবাদের মন্দির স্থপতিদের সোমপুর পরিবারের অন্তর্গত, যারা ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মন্দির তৈরি করে আসছে। তিনি পরিবারের ১৫তম প্রজন্ম, যা হিন্দু পুরাণের ঐশ্বরিক স্থপতি বিশ্বকর্মার সঙ্গে তার বংশের পরিচয় দেয়। রাম মন্দিরের সঙ্গে সোমপুরার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে, যখন তাকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) মন্দিরের নকশা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তিনি প্রথমে অযোধ্যার সেই স্থানটি পরিদর্শন করেন। কিন্তু তাঁকে তখন সেখানে জমি মাপার ফিতে নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কারণ এটি একটি সংবেদনশীল এবং বিতর্কিত এলাকা ছিল বলে। টেপ না থাকায়, পা দিয়ে মেপে পুরো জমির আনুমানিক জরিপ করেন চন্দ্রকান্ত। সেই ধারণার উপর ভিত্তি করেই তৈরি করেন নকশা। তবে একটা নয়, মন্দিরের একাধিক নকশা তৈরি করেছিলেন চন্দ্রকান্ত।

তিনি মন্দির নির্মাণের তত্ত্বাবধানে গঠিত ট্রাস্ট ভিএইচপি এবং রাম জন্মভূমি ন্যাস-এর কাছে জমা দেওয়া নকশাগুলির জন্য ছয় মাস কাজ করেছিলেন। নকশা তৈরির পর সেগুলি নিয়ে অশোক-সহ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাকি নেতৃত্বের কাছে যান চন্দ্রকান্ত। তাঁর নকশাগুলি ট্রাস্ট দ্বারা অনুমোদিত এবং গৃহীত হয়েছিল এবং তিনি মন্দিরের প্রধান স্থপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর একটি কাঠের মডেল বানিয়ে সেই কাঠামো কুম্ভমেলায় আগত সাধুদের দেখানো হয়। সাধুরা ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়ার পরেই মান্যতা পায় তাঁর নকশা। তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ত্রিশ বছর। অবশেষে ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠা হতে চলেছে তাঁর রামমন্দিরের।

এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মন্দিরের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। যা পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ হবে। নাগারা শৈলীর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা উত্তর ভারতে প্রচলিত। নবনির্মিত রাম মন্দিরটিতে তিনটি গম্বুজ, পাঁচটি মন্ডপ (হল), ৩৮০ ফুট লম্বা, চওড়ায় ২৫০ ফুট এবং উচ্চতায় ১৬১ ফুট। মন্দিরে মোট ৩৯২টি পিলার ও ৪৪টি গেট রয়েছে। তিনতলা মন্দিরটির প্রতিটি তলার উচ্চতা ২০ ফুট করে। যা এটিকে ভারতের সবচেয়ে উঁচু মন্দিরে পরিণত করবে।’ 

তাঁর কথায়, আগামী অন্তত ১০০০ বছরে এই মন্দিরের কোনও ক্ষতি হবে না বলে জানা গিয়েছে। যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও আগামী ১০০০ বছর সামলে নিতে পারবে নবনির্মিত রাম মন্দিরটি। তিনি এও জানান, মন্দিরটি রাজস্থানের গোলাপী বেলেপাথর দিয়ে তৈরি করা হবে, যা তার স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। সোমপুরা অযোধ্যার কাছে কারসেবকপুরমের একটি কর্মশালায় পাথর খোদাইয়ের তত্ত্বাবধান করেছেন, যেখানে কয়েকশ কারিগর বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। তারপরই জোর কদমে শুরু হয়েছিল মন্দির তৈরির কাজ। 

অন্যদিকে বলাবাহুল্য, চন্দ্রকান্তের বাবাও ছিলেন স্থপতি। গুজরাতে এখন যে সোমনাথ মন্দির দেখতে পাওয়া যায়, তার নকশা তৈরি করেন চন্দ্রকান্তের বাবা প্রভাকর সোমপুরা। এ ছাড়াও বহু মন্দিরের নকশা তৈরি করেন প্রভাকর। চন্দ্রকান্ত তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৩১টি মন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন চন্দ্রকান্ত। সোমপুরা ভারতে এবং বিদেশে আরও বেশ কয়েকটি মন্দিরের নকশাও করেছেন তিনি। সেগুলির মধ্যে অন্যতম দিল্লির স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম, গুজরাটের সোমনাথ মন্দির, কলকাতার বিড়লা মন্দির এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় আটলান্টার হিন্দু মন্দির। তিনি তার কাজের জন্য ২০২০ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সহ বেশ কয়েকটি পুরষ্কার এবং সম্মান পেয়েছেন।

চন্দ্রকান্ত জানিয়েছেন, রামমন্দিরের নকশা তৈরি করা তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য গর্বের বিষয়। অযোধ্যার রামমন্দির নাগারা বা উত্তর ভারতীয় মন্দিরশৈলীর আদলে তৈরি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।