‘কুষ্টিয়ায় খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি চাল ৬৪ টাকার বেশি বিক্রি হলে ব্যবস্থা’

চালের দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা বাড়ানোর পর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ২ টাকা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন সরু চালের বৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের মিল মালিকরা। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন তাদের দাম মেনে নিয়ে খুচরা পর্যায়ে ৬৪ টাকার বেশি বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। 

রবিবার বিকেল চারটায় শুরু হওয়া মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হট্টগোল করেন বাংলাদেশে চাল নিয়ে কারসাজির অন্যতম হোতা বলে খ্যাত আব্দুর রশিদ। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত চলা ওই সভায় অংশ নেন চালকল মালিক, আমদানীকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছে ধান-চাল কী দামে কেনা ও বিক্রি হয়েছে তার খোঁজখবর নেন।

সভায় মিল মালিক আনোয়ারুল ইসলাম চালের দাম বাড়ার দায় চাপান সরকারি সংগ্রহ অভিযানের ওপর। তিনি বলেন, নভেম্বরে সরকার ধান-চাল সংগ্রহের দর ঘোষণার সময় চালের দাম কেজি প্রতি ৪৪  টাকা দেওয়া হয়। এরপরই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চালের দাম। তিনি বলেন, চালের দাম কমাতে হলে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

স্বর্ণা অটোরাইস মিলের মালিক আব্দুস সামাদ বলেন, ঘনকুয়াশা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভোটের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তবে এখন কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, সরু চালের মৌসুম থেকে ৯ মাস অতিক্রম করেছে। এই সময়ে প্রতিবছরই সরু চালের দাম বেড়ে থাকে। আমরা কমানোর চেষ্টা করছি। দেশ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেক বলেন, মিল মালিকদের অতিরিক্ত চাপ দিলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মাত্র ৫/৬ জন মিলার সিন্ডিকেট করে। প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের খুঁজে বের করা।

বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, চালের বাজার এখন প্রতিযোগিতামূলক। এখানে কেউ সিন্ডিকেট করে না। তিনিও সরকারি সংগ্রহ অভিযানের দরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে গিয়ে সরকারই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি করপোরেট কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে সাংবাদিকরা বারবার ওইসব কোম্পানির নাম চাইলেও তিনি তা প্রকাশ করেননি। এ সময় সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের কারণে ক্ষিপ্ত হন আব্দুর রশিদ। মিটিং ছেড়ে উঠে যেতে উদ্যত হন এই ব্যবসায়ী।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা প্রথমে মিল পর্যায়ে কেজি প্রতি ৬২ থেকে ৬৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৪ থেকে ৬৫ নির্ধারণ করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সাংবাদিকরা আপত্তি জানিয়ে বলেন, বর্তমানেই বাজারে এই দরে চাল পাওয়া যাচ্ছে। যেখান থেকে দাম বাড়া শুরু হয়েছিল সেই ৬১ টাকা কেজি দরে নিয়ে আসার দাবি জানান তারা। এরপর চালকল মালিকদের নেতা ওমর ফারুক ধান কেনা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, এতে বন্ধ হয়ে যাবে চাল সরবরাহ।

শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক মিল পর্যায়ে ৬২ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৬৪ সরু চাল বিক্রির প্রাথমিক দর নির্ধারণ করে দেন। তিনি বলেন, এর বেশি দরে কেউ বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় লোকমুখে প্রচলিত গল্প তুলে ধরে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা দাম বাড়িয়ে ২ টাকা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মিল মালিকদের পক্ষেই গেল। তবে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, মজুদদার ও ফটকা কারবারির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। দুয়েক দিনের মধ্যেই মিল পর্যায়ে অভিযান শুরু হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে দাম আরও কমে আসবে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আখতার, গণমাধ্যমকর্মী ও মিলমালিকরা।



শাকিল/সাএ