‘বাংলাদেশের ফুটবলে তেল-বাটার মারতে না পারলে খেলতে পারবেন না’

৪ বছর আগে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা ‘জিপিএস’-এর তথ্য অনুযায়ী ঘণ্টায় ৩২.০৪ কিলোমিটার গতিতে দৌড়ে খেলেছেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। এই গতির পরিসংখ্যানটি তখনকার  কোচ মারুফুল হকই দিয়েছিলেন। গতি শুধু নয়, স্কিল দিয়ে খেলে জাতীয় দলে প্রায় ৪ বছর মাঠ মাতিয়েছেন সুফিল। হঠাৎ করে ২০২২ সাল থেকে ছন্দপতন। মালয়েশিয়া থেকে হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে লাল-সবুজ দলের হয়ে খেলে এসে সেই যে ছিটকে গেছেন, এখন তো দলছুট এক তারকা! আশার কথা অনেক দিন পর চলমান প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে আগের দিনই জোড়া গোল করে আবারও আশার আলো দেখছেন। মাঝে ক্যারিয়ারের দুঃসময় নিয়ে তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়েছে ঝাঁজালো মন্তব্য। 

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসে খেলেছেন সুফিল। প্রথম দুই বছর মোটামুটি খেলতে পারলেও পরের দুবার সাইড বেঞ্চে সময় কাটিয়েছে। খেলার জন্য ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে যোগ দিলেও সেখানে দুর্গতি কাটেনি। শুরুর দিকে সেভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন কমই। এরপর তো চোটের কারণে ছিটকে পড়েছিলেন। সবমিলিয়ে ৫টির মতো ম্যাচ খেলেছেন। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পারিশ্রমিকও পাননি সেভাবে। এ নিয়ে সুফিলের ক্ষোভ কম নয়।

বাংলা ট্রিবিউনকে ২৪ বছর বয়সী স্ট্রাইকার প্রকারান্তরে মোহামেডানের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে  বলেছেন, ‘কিংসে চার বছর খেলছি। প্রথম দুই বছর খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। পরের দুই বছর পাইনি। মোহামেডানে এসেছিলাম খেলার জন্য। কিন্তু সেভাবে খেলার সুযোগ পাইনি। আসলে বাংলাদেশের ফুটবলে তেল-বাটার  মারতে না পারলে খেলতে পারবেন না। যত মারবেন তত খেলতে পারবেন। আমি কোনও দিন বাটার কিংবা তেল মারতে পারিনি। যে কারণে সমস্যা হয়েছে। মারলে হয়তো সমস্যা হতো না। রাতে জানতাম পরের দিন খেলতো পারবো। ম্যাচ শুরুর আগে আমি নেই!’

সাদা-কালো দলে ৫টি ম্যাচ খেলেছেন। মৌসুম শেষে  ঠিকঠাক পারিশ্রমিকটাও পাননি। সুফিলের আরও ক্ষোভ,‘বেতন কেন খুঁজছিলাম, সেই জন্য শোকজ পেয়েছিলাম ওখানে। একটা নয় দুই বা তিনটি। বলেন এটা কোনও কথা হলো। মৌসুম শেষে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা এখনও পাইনি। আসলে শুরুর দিকে খেলানো হয়নি সেভাবে। আর মাঝে ইনজুরি ছিল। সব মিলিয়ে সাদা-কালো ক্লাবে আমার মোটেও ভালো সময় কাটেনি। ভুল ছিল সেখানে খেলাটা।’

দুঃসময় কাটিয়ে বর্তমানে ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলছেন সিলেট থেকে উঠে আসা ফুটবলার। ২০১৮ তে জাতীয় দলের হয়ে লাওসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অভিষেক গোল পেয়েছিলেন। ২৯ ম্যাচে ৫ গোল আছে। চাইছেন এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলে আবারও লাল-সবুজ দলে জায়গা করে নিতে। তবে এখনও আগের মতো গতি নেই। কিছুটা কমেছে। সুফিল আশা করছেন শিগগিরই তা ঠিক হবে যাবে, ‘স্পিড কমছে আগের চেয়ে। এখন খেলতে খেলতে আবার আগের জায়গায় ফিরবে বলে বিশ্বাস। এখন সুস্থ হয়ে খেলছি। আমার লক্ষ্য হলো জাতীয় দলে ফেরা। আশা করছি ফিরতে আমি পারবোই।’

সুফিলের মোহামেডানে ক্লাবে খেলা প্রসঙ্গে নানান অনুযোগ কিংবা অভিযোগ নিয়ে ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব অন্য কথা বলেছেন, ‘সুফিল  ভালো খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে। তবে অনেক দিন বসে থাকার কারণে ওর মধ্যে লড়াকু স্পিরিটটা কমে যায়। আর একটা দলে ৩৫ জন খেলোয়াড় থাকে। সেরা ১১ জনই মাঠে খেলে। হয়তো সেই কারণে ও গেম টাইম কম পেয়েছে। তারপরও ওকে কম সুযোগ দেওয়া হয়নি। আর পারিশ্রমিক বকেয়া নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এটা নিয়ে কথা বললে অনেক কথা বলা যায়। আমি চাই ও ভালো খেলোয়াড়। ও যেন আগের রূপে ফিরে আসে।’