Ramayana Saree: শাড়িতে রয়েছে আস্ত রামায়ণ, বীরেনের ‘কাজ’ যাচ্ছে অযোধ্যায়

বাংলার কুটিরশিল্পের নাম বিশ্বব্যাপি। সুন্দরবনের মধু, গাঁদা ফুল আগেই স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের দরবারে। এ বার পালা শাড়ির। পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাকের তৈরি রামায়ণ শাড়ি যাচ্ছে অযোধ্যায়। রামমন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি এই শাড়ি সেখানে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে রামমন্দির উদ্বোধনের আগে নয়, সে শাড়ি অযোধ্যায় পাঠাতে বলা হয়েছে ২৬ জানুয়ারির পরে। এতেই খুশির হাওয়া নদিয়া জেলার ফুলিয়া অঞ্চলে।

পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী বীরেন বসাকের কথায়, ‘আমরা কৃত্তিবাস ওঝার বাসস্থান ফুলিয়ার মানুষ। আমার বহু দিনের ইচ্ছা ছিল এই শাড়িটা অযোধ্যায় তৈরি হওয়া রামমন্দিরে দেওয়ার। অবশেষে ওঁরা আমার এই কাজ নেবেন বলেছেন। বাংলার তাঁতশিল্পের একটা দৃষ্টান্ত সেখানে থাকবে।’

নদিয়া জেলার ফুলিয়ার তাঁত শিল্পী বীরেন বসাক ১৯৯০-এর দশকে টিভিতে রামায়ণ সিরিয়াল দেখে রামায়ণের কাহিনি নির্ভর শাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেন। তিনি প্রথমে ফুলিয়ার বয়রাতে কৃত্তিবাস স্মৃতি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা থেকে রামায়ণ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি রামায়ণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পড়েন এবং নিজেও রামায়ণ পড়েন। তারপর তিনি একজন পরিচিত শিল্পীকে দিয়ে রামায়ণের বিভিন্ন চিত্র আঁকিয়ে নেন। এরপর দুজন তাঁত শিল্পীর সহায়তায় প্রায় দুই বছরের চেষ্টায় তিনি দুটি রামায়ণ শাড়ি তৈরি করেন।

শাড়ি দুটি জামদানির কাজের উপর ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। সিল্কের উপর সিল্কের সুতো দিয়ে রামায়ণের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। শাড়ির দুই পাড়ে রামায়ণের বিভিন্ন কাহিনির চিত্রায়ণ রয়েছে। আঁচলে ফুটে উঠেছে রাম-রাবণের যুদ্ধ, রাজ্যাভিষেক, সীতার পাতাল প্রবেশের মতো কাহিনী। রামায়ণ শাড়ি তৈরির জন্য বীরেন বসাক বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি তার এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলার তাঁত শিল্পকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন।

বীরেন জানান, প্রথমে দু’টি রামায়ণ শাড়ি তৈরি করার পর সাধারণ মানুষের আগ্রহে ও চাহিদায় আরও ছয়টি শাড়ি তৈরি হয়। যা বিভিন্ন মানুষ নিয়েছেন। তবে প্রথম তৈরি হওয়া দু’টি শাড়ির মধ্যে একটি যাচ্ছে অযোধ্যার রামমন্দিরে। তাঁর তৈরি রামায়ণ শাড়ি দেশে, বিদেশের নানা প্রদর্শনীতে গিয়েছে। উচ্চ প্রশংসাও পেয়েছে। সেই সময় তৈরি করা দু’টি শাড়ির মধ্যে একটি অযোধ্যায় নির্মিত রামমন্দিরে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি। মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সম্প্রতি সম্মতি মিলেছে। ২৬ জানুয়ারির পর শাড়ি পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও বীরেনবাবুর কীর্তি রয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কাপড়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ভারতের মানচিত্র ও মনীষীদের মুখের অবয়ব৷ সেই শাড়িতে ভারতের মানচিত্র, দেশ বরেণ্য ৩৪ জনের অবয়ব ছিল৷ সেইসঙ্গে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবও হস্ত চালিত তাঁত শিল্পীর শিল্প নিপুণতায় ফুটে উঠেছিল। এছাড়াও বীরেনবাবু সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, ক্রীড়া জগতের যুবরাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি-সহ বিখ্যাত মানুষদের পোর্ট্রেট হাতে চালানো তাঁতে, জামদানি বুটির আদলে হুবহু ফুটিয়ে তুলেছিলেন।