Speech and Essay on Netaji: স্কুলে নেতাজি জয়ন্তীতে কিছু বলতে হবে? চট করে ঝালিয়ে নিন এখান থেকে

২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্যের একটি সরকারি ছুটির দিন। এই দিনটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন বা পরাক্রম দিবস হিসেবে পালিত হয়। 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশের আট থেকে আশি তাঁকে আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। দেশকে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিতে প্রাণপ্রণ লড়েছিলেন এই বঙ্গ সন্তান। 

কে ছিলেন নেতাজি?

সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি, ওড়িশার কটক শহরে। তাঁর পিতা জানকীনাথ বসু ও মাতা প্রভাবতী দেবী। মেধাবী ছাত্র সুভাষ কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথমে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে বিলেতে গিয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন সুভাষ।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে দেশে ফিরে এসেছিলেন সুভাষ। কিন্তু ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি? গ্রহণ করলেন না তিনি। চাকরির বদলে বরং দেশকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগ দিলেন।

অল্পদিনের মধ্যেই সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা হয়ে উঠেছিলেন। দুবার কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন। এরপর একবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন‌ সুভাষ। ইংরেজ সরকার তাঁকে বাড়িতে নজরবন্দি করে রেখেছিল। তবে ঠিক সময় ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে যান তিনি। তখন ১৯৪১ সাল। প্রথমে জার্মানিতে, সেখান থেকে পরে জাপান চলে যান বঙ্গ বীর। জাপানে রাসবিহারী বসুর সঙ্গে যােগ দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেই প্রথম সকলের কাছে নেতাজি হয়ে উঠলেন সুভাষ। এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বাহিনী নিয়ে উত্তর -পূর্ব ভারতের মণিপুর দখল করে সেখানে ভারতের পতাকা উড়িয়ে দেন।

কিন্তু আরও এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি নামে। এছাড়াও রসদের অভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজকে হার মানতে হয়। নেতাজি গঠিত আজাদ হিন্দ সরকারের পতনের পর থেকে তাঁর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে মুখার্জি কমিশন প্রমাণ করে ওই বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়নি। এছাড়াও জাপানের রেনকোজী মন্দিরে রাখা চিতাভষ্ম আসলে নাকি নেতাজির চিতাভস্ম নয়। তিনি অন্তর্হিত হলেও তাঁর দৃপ্ত বক্তব্য আজও তরুণদের উদ্দীপ্ত করে। তার বিখ্যাত বাণী, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ গোটা দেশের স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে অন্যতম দৃপ্ত বাক্য। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে অসংখ্য শ্রদ্ধার্ঘ জানাই। তার বাণী যেন আমরা জীবন দিয়ে সফল করে তুলতে পারি।

জেনে রাখা ভালো:

  • নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন নেতা এবং অবিভক্ত ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। তিনি ১৯৩৮ সালে কংগ্রেস সভাপতি হন এবং ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন।
  • নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪১ সালে জার্মানিতে যান এবং সেখানে ভারতীয় স্বাধীনতা সেনাবাহিনী বা আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
  • নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মহান নেতা। তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, একজন বীরযোদ্ধা এবং একজন দূরদর্শী নেতা। তার আদর্শ ও কর্ম আজও ভারতবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা।
  • নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা করা হয় এবং তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।