কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়, বড় চ্যালেঞ্জ মেট্রোরেল

ভাষার মাসের প্রথম দিন শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির। স্টল তৈরির কাজও চলছে দেদার। নগরীতে নতুন বাহন মেট্রোরেল চলাচল করায় এবারের বইমেলায় লোকসমাগম বেশি হবে বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা। এদিকে বরাবরের মতো মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে এবার। তবে পুলিশ বলছে, মেট্রোরেলের কারণে লোকসমাগম যেমন বাড়বে, তেমনই মেট্রোরেলের নিরাপত্তাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে।    

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে মেলা প্রাঙ্গণসহ চারপাশ ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, চুরি-ছিনতাই, অগ্নিকাণ্ড এবং ট্রাফিক সবদিক বিবেচনায় রেখে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এরপরও গেলো বছরগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়নি। গত বছর মেলা চলাকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ নামে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার ওপর বোমা হামলার হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি পাঠানো হয়েছিল।

মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বিগত বছরের চেয়ে এবার পাঠক ও দর্শনার্থীদের সমাগম বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন মেলার আয়োজকরা। তারা বলছেন, মেট্রোরেলের জন্য মেলায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। দর্শনার্থী, ক্রেতা ও পাঠকের ভিড় বাড়লেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কোনও কারণ নেই।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘মেলার সার্বিক দিক নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবো। তবে মেলার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই।’ তিনি আশা করছেন মেট্রোরেল চালু হওয়ায় এবার মেলায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

অপরদিকে  বইমেলা চলাকালে মেট্রোরেলের নিরাপত্তাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে পুলিশ। কারণ, মেট্রোরেলেও নাশকতা হতে পারে। ফলে সব কিছু মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা বলয় সাজাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মেলায় থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। এরইমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ডিএমপি জানিয়েছে, প্রত্যেক ক্রেতা-দর্শনার্থীকে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হবে। মেলার ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। সিসিটিভি দিয়ে মেলার ভেতরে ও চারপাশ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রদানে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, ফায়ার টেন্ডার। আরও থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সুইপিং করা, সাদা পোশাকে বিশেষ টিম মোতায়েন, বিলবোর্ড, ব্যানার ও মাইকিং করে দিকনির্দেশনা প্রদান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং, ড্রোন দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ মনিটরিং করা হবে। এছাড়া পুলিশের ‘সোয়াট’ ও ‘বোম্ব ডিসপোজাল টিম’ স্ট্যান্ডবাই থাকবে।

নির্মাণাধীন বইয়ের স্টল মেলার নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবারই নিরাপত্তা ব্যবস্থা একই রকম হয় না। একেক বারের চ্যালেঞ্জ একেক রকম। এসব চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করেই নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়। যখন যে ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সে ধরনের নিরাপত্তা আমরা প্রয়োগ করি।’

তিনি বলেন, ‘এবার মেট্রোরেল একটি চ্যালেঞ্জ। মেট্রোরেলের কারণে বইমেলায়  লোকজনের যাতায়াত বেড়ে যাবে। অনেক দূর থেকে অল্প সময়ে মানুষ মেলায়  আসবে। পাঠাক-লেখকদের পাশাপাশি অনেকে মেলায় ঘুরতে আসবেন। সব কিছু বিবেচনা করেই এবার নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বইমেলাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখার জন্য যখন যা কিছু করার প্রয়োজন, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা এরইমধ্যে গ্রহণ করেছি।’

বইমেলার নিরাপত্তার বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেসব নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে উগ্রবাদীরা। অতীতের ঘটনাগুলো মাথায় রেখে আসন্ন একুশে বইমেলায় র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সাইবার টিম কাজ করছে। মেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হবে।’

বইমেলার স্টলের বিভিন্ন উপকরণ তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আমাদের আলাদা বুথ থাকবে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়া সব গেটে র‍্যাবের বিশেষ টিম থাকবে। পাশাপাশি মেলার চারপাশে টহল টিম অবস্থান করবে। এছাড়া মেলা আয়োজকদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।’

উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৪’ উদ্বোধন করবেন। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণে চলবে বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম