গলায় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মৃত্যু ১৯ বছরের বধূর, নার্সিংহোমে বিক্ষোভ পরিজনদের

গলায় সামান্য ব্যথা হচ্ছিল। শীত কালে মাঝে মধ্যেই যেমন হয় আর কি… তবু অবহেলা করতে রাজি ছিলেন না ১৯ বছরের সদ্য বিবাহিত তরুণী। ছুটে গিয়েছিলেন ডাক্তারের কাছে। সেটাই হল কাল। চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মীনাক্ষী বৈরাগী সরকার নামে ওই তরুণী। ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে সোমবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইআটির কাজি নজরুল ইসলাম সরণি লাগোয়া অ্যাপেক্স নার্সিংহোমে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয়রা। তাদের দাবি, অভিযুক্ত চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গলা ব্যথা সারছিল না বলে দিন কয়েক আগে নাক – কান – গলা বিশেষজ্ঞ রাহুল সরকারের পরামর্শ নিতে যান ১৯ বছর বয়সী বধূ মীনাক্ষী। চিকিৎসক তাঁকে জানান, গলায় সংক্রমণ হয়েছে, অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেজন্য অ্যাপেক্স নার্সিংহোমে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। ২৫ জানুয়ারি তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎকের পরামর্শ মেনে রবিবার বেলা ১টা নাগাদ মীনাক্ষীদেবীর গলায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক রাহুল সরকার। দুপুর ২টোয় পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। মীনাক্ষীদেবী সুস্থ রয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, কিন্তু রোগীনি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। এর পর মীনাক্ষী শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। রাত ১০টা নাগাদ তাঁকে ICUতে স্থানান্তর করা হয়। তার কিছুক্ষণ পরই পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় বধূর মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসক রাহুল সরকারের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে সোমবার সকালে নার্সিংহোমের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন রোগীর আত্মীয়রা। অভিযুক্ত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে চান বলে দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছয় পুলিশ।

মৃতের দাদার দাবি, আমার বোন চিকিৎসায় গাফিলতিতে মারা গিয়েছে। আমার বোনকে চিকিৎসক মেরে ফেলেছে। আমার বোনের হাই প্রেশার ছিল। সেসবের পরোয়া না করেই অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। আমরা এই চিকিৎসকের শাস্তি চাই। চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যাতে আর কারও বোন এভাবে চলে না যায়। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।

হাসপাতালের তরফে এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর রোগীনি ভালোই ছিল। হঠাৎ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে আসেন চিকিৎসক রাহুল সরকার। আরও এক চিকিৎসক রোগীনিকে দেখেন। রোগীনির রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সেই সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়টিও পরিবারকে জানানো হয়েছিল। পরিবার সব জেনেই অস্ত্রোপচারে সম্মতি জানিয়েছিল। সম্ভবত রোগীনির সেপটিসেমিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। রোগীর পরিবারের দাবি মেনে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।