Jharkhand Ex CM Hemant Soren Arrest: পদত্যাগ করতেই গ্রেফতার ঝাড়খণ্ডের সদ্য প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী হেমন্ত সোরেন

জমি সংক্রান্ত আর্থিক তছরূপ মামলায় গ্রেফতার হেমন্ত সোরেন। বুধবার রাতে তিনি রাজ্য়পালের কাছে তিনি ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  দীনদয়াল নগর ক্য়াম্প জেলে রাখা হবে হেমন্তকে।

এদিকে এই মামলায় ১জন আইএএস সহ ১১জন গ্রেফতার করা হয়েছে আগে। সূত্রের খবর, হেমন্তকে গ্রেফতার করা হতে পারে এই আশঙ্কায় আগে থেকেই বিকল্প মুখ্য়মন্ত্রীর নাম ঠিক করে রেখেছিল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। শেষ পর্যন্ত চম্পাই সোরেন বসতে পারেন ঝাড়খন্ডের মুখ্য়মন্ত্রীর চেয়ারে।

তবে লোকসভা ভোটের মুখে সদ্য প্রাক্তন সিএম হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করার ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এবার কি আরও টালমাটাল হয়ে গেল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা সরকার? 

এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে রাঁচিতে জমি সংক্রান্ত অনিয়মের মূল সুবিধাভোগী তিনি৷ রেজিস্ট্রার অফিসে রেকর্ড জাল করে জমির জাল দলিল তৈরি করে দালাল ও ব্যবসায়ীদের একটি নেটওয়ার্ক বছরের পর বছর ধরে কাজ করছিল৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে হেমন্ত সোরেন ঝাড়খণ্ডে তদন্তের অধীনে কিছু জমি দখল করেছিল, যা অন্যরা জাল নথির মাধ্যমে বেআইনিভাবে পেয়েছিল।

কলকাতার ব্যবসায়ী অমিত কুমার আগরওয়াল, যাকে গত বছরের ৭ জুন ইডি গ্রেপ্তার করেছিল, তিনিও সোরেনের গ্রেপ্তারের মূল চাবিকাঠি, কারণ তিনি ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের দুর্নীতির তহবিলের হ্যান্ডলার বলে সন্দেহ করা হয়, যেমনটি ২০২১ সালে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে আইনজীবী রাজীব কুমারের মাধ্যমে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল।

হেমন্ত সোরেনই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হলেন। গত বছরের অগাস্ট মাস থেকে অন্তত সাতবার ইডির জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গেলেও অবশেষে ২০ জানুয়ারি রাঁচিতে নিজের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রাজি হন তিনি। তবে আগামী ২৯ বা ৩১ জানুয়ারি তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

জেএমএম নেতা রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরে ইডি দল বুধবার রাজ্যের রাজধানীতে তাঁর সরকারী বাসভবনে যায় এবং প্রায় সাত ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার আগে রাত ১০টা নাগাদ তাকে রাঁচিতে এজেন্সির অফিসে গ্রেপ্তার করা হয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে, যেখানে এজেন্সি তার বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগের ব্যাখ্যা দেবে।

ইডির ইতিমধ্যে জমি কেলেঙ্কারিতে চার্জশিট দাখিল করেছে। অমিত আগরওয়াল, আইএএস ছবি রঞ্জন এবং আরও আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে – দিলীপ কুমার ঘোষ (আগরওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী), প্রদীপ বাগচী, আফসার আলি (কথিত কিংপিন যিনি জমির সম্পত্তিতে জাল দলিল তৈরি করেছিলেন), মহম্মদ সাদ্দাম হুসেন, ইমতিয়াজ আহমেদ, তালহা খান, ফৈয়াজ আহমেদ, ভানু প্রতাপ প্রসাদ এবং আগরওয়ালের সঙ্গে যুক্ত তিনটি সংস্থা – জগৎবন্ধু টি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড, রাজেশ অটো মার্চেন্ডাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং অরোরা স্টুডিও প্রাইভেট লিমিটেড।

রাঁচির মোরাবাদি মৌজায় ৪.৫৫ একর প্রতিরক্ষা জমি এবং রাঁচির হেহালে ৭.৬ একর জমির পার্সেল দখল করার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সার্কেল অফিস ও রেজিস্ট্রার অফ অ্যাসিওরেন্সে (আরওএ) জাল দলিল তৈরি করে বলে অভিযোগ।

সব মিলিয়ে অন্তত ২৭টি সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করেছে ইডি, যার মধ্যে অভিযুক্তরা ভুয়ো দলিল তৈরি করেছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুসারে জানা গিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডির এক আধিকারিক বলেন, অভিযুক্তরা কলকাতা থেকে টার্গেট করা জমির পুরনো দলিল তৈরি করে কলকাতার আরওএ-তে মূল রেজিস্টারে লাগিয়েছিল। তারপর তারা ওই দলিলের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করত এবং পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি হস্তান্তর করত। তাদের কাছে জাল স্ট্যাম্প/সিলমোহর ছিল, যার মাধ্যমে তারা এসব জাল দলিল তৈরি করেছে।

ইডি জানিয়েছে, রাঁচিতে যে ৪.৫৫ একর জমি জাল নথি তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছিল, তা প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছিল। ইডির চার্জশিটে বলা হয়েছে, রাঁচির বারিয়াতুর বাসিন্দা আফসার আলি ও তাঁর সঙ্গীরা কলকাতার আরওএ-র অফিস থেকে প্রফুল্ল বাগচী নামে একটি ভুয়ো দলিল তৈরি করেছিলেন।

আফসার আলি ইডির কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি সেনাবাহিনীর দখলে থাকা সম্পত্তির জাল দলিল তৈরি করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে এই জমিটি প্রেম প্রকাশের সহায়তায় জগৎবন্ধু চা এস্টেটগুলিকে ৭ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল তবে মাত্র ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, অমিত আগরওয়াল, প্রেম প্রকাশ এবং ছবি রঞ্জন এই রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তাঁরা জানতেন না বলেই কোনও সরকারি আধিকারিক সম্পত্তি নথিভুক্ত করার জন্য টাকা দাবি করেননি।

মজার ব্যাপার হল, জয়ন্ত কারনাড নামে আরেক ব্যক্তি এই একই সম্পত্তি দাবি করেছিলেন, যিনি এতে স্বত্ব দাবি করে ভুয়ো নথি তৈরি করেছিলেন এবং তারপরে ২.৫৫ কোটি টাকায় ১৬টি বিক্রয় দলিলের মাধ্যমে ১৪ জনের কাছে বিক্রি করেছিলেন।

হেহাল সম্পত্তির ক্ষেত্রেও দালালরা একটি জাল দলিল তৈরি করেছিল এবং মূল দলিলগুলি জেলা সাব রেজিস্ট্রার, রাঁচি অফিসের মূল রেজিস্টার থেকে ছিঁড়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছবি রঞ্জন এই জমির জামাবন্দি (অধিকারের রেকর্ড) বাতিল করে বিনোদ সিং নামে এক ব্যক্তির নামে এই সম্পত্তির মিউটেশনের অনুমতি দেয়। ইডির চার্জশিটে বলা হয়েছে, শ্যাম সিং ও রবি সিং ভাটিয়া নামে দুই ব্যক্তির কাছে ১৫ কোটি টাকায় সেটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

সোরেন অমিত আগরওয়ালের ৪.৫৫ একর জমি দখল করেছেন নাকি শ্যাম সিং ও রবি ভাটিয়ার কাছে বিক্রি করা ৭.৬ একর জমি দখল করেছেন তা প্রকাশ করেনি সিবিআই।