খেলার মাঠে মেলার থাবা

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শহরের শিশু-কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রাণকেন্দ্র চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়াম। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে মেলা। মেলার অনুমতিও দিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

এ নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে খেলোয়াড়দের মাঝে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খেলার মাঠে মেলা বন্ধের দাবিও করছেন। উন্নয়ন বোর্ডের এই মেলা শুরু হবে বৃহস্পতিবার বিকালে। চলবে তিন দিন। মেলাটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার।

খেলোয়াড়দের অভিযোগ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ২০১৬ সালের পর ২০২৩ সালে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ করে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরুর কথা থাকলেও মেলার কারণে এখনও খেলার তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি।

উল্টো মাঠে মেলা করায় খেলার পরিবেশ ও প্র্যাকটিস করতে পারছে না। অন্যদিকে অনেক একাডেমি মেলার কারণে তিন দিন প্র্যাকটিস ঘোষণা করেছে।

খেলোয়াড়দের অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদকমুক্ত দেশ গঠনের জন্য সারা দেশে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের খেলার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে খেলা রুদ্ধ করে মেলা বসছে স্টেডিয়ামে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের পাশেই একটি মাঠ ছিল। সেখানেও মেলাটি করা যেত। তবুও
খেলার মাঠে মেলা হওয়াটি খুবই দুঃখজনক।

ডানামিক ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড় বকুল চাকমা ও রিমেল চাকমা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে থেকে তিন দিন মেলা হবে তাই একাডেমি তিন দিন বন্ধ দিয়েছে। এই তিন দিন কোনও খেলা হবে না।

খেলার মাঠে মেলার থাবা

প্রথম বিভাগের প্রগতী ক্লাবের খোলোয়াড় রিক্যালে চাকমা বলেন, আর কয়েকদিন পর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ শুরু হবে। কিন্তু মেলার কারণে ঠিকমতো প্র্যাকটিস করতে পারছি না। ফুটবল হলে যেখানে সেখানে প্র্যাকটিস করা গেলেও ক্রিকেটে তা সম্ভব না। প্র্যাকটিস না হলে প্রস্তুতিও ভালো হবে না।

রফিক স্মৃতি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন সাকু বলেন, ২৫ তারিখ প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের জন্য তালিকা ও ফি জমা দানের শেষ তারিখ ছিল। এখন কখন খেলা হবে সেটাও জানি না। এর মধ্যে মেলা চলছে মাঠে। আর শহরের অনেক ক্লাবের নিজস্ব মাঠ নেই। তাই ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়রা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করে থাকে। এখন এই মেলার কারণে টিমের খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে না।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আজম বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন না হওয়ায় আমি খুব ঝামেলায় আছি। মেলা করার অনুমতি ডিসি স্যার দিয়েছে। আমি জানি না। ৭
তারিখের মধ্যে অতিথি ঠিক করতে পারলে ৮ তারিখ থেকে লিগ শুরু করা যাবে। এর পর ফুটবল ছাড়বে সেখানে উন্নয়ন বোর্ড ২৫ লাখ টাকা দেবে। গত কয়েক বছর প্রায় আড়াই তিন কোটি টাকা দিয়েছে। এই অর্থবছরে গ্যালারির বাকি অংশ ও মাঠ সংস্কার করে দেবে।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, মাঠে তো মেলা হচ্ছে না। মাঠের কর্নার ঘেঁষে  স্টল করা হয়েছে। এতে মাঠের কোনও সমস্যা বা প্র্যাকটিসের সমস্যা হওয়ার কথা না। এটা তো মাত্র তিন দিনের, পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।