প্রাইভেটকারে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন জেমস

সাতক্ষীরায় কোট প্যান্ট পরে প্রাইভেটকারে এসে ঝাল মুড়ি বিক্রি করছেন আরিফুল ইসলাম জেমস নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। সাতক্ষীরা শহরের আমতলা মোড় এলাকায় নিয়মিত ঝাল মুড়ি বিক্রি করছেন তিনি। ইতোমধ্যে জেমসের হাতের ঝালমুড়ি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

আরিফুল ইসলাম জেমস সাতক্ষীরা মধ্য কাটিয়ার এলাকার মৃত. আফজালুর রহমানের ছেলে। আরিফুল ইসলাম জেমস স্থানীয় কয়েকটি  এনজিওসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তাছাড়া তিনি একাধিক প্রাইভেটকারের মালিক। চাকুরি ছেড়ে বেশ কিছুদিন বেকারত্ব থেকে ভিন্নধর্মী এই পরিকল্পনা আসে জেমসের মাথায়।

এদিকে, কোট প্যান্ট পরিহিত মার্জিত পোশাকে প্রাইভেটকারে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি দেখতে রীতিমতো ভিড় জমাচ্ছেন লোকজন। গত সাত দিন যাবত সাতক্ষীরা শহরের আমতলা মোড়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন তিনি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নিয়মিত ক্রেতা হয়ে গেছে তার। বেচা বিক্রি নিয়েও বেশ সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন আরিফুল ইসলাম জেমস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঝালমুড়ির ব্যবসাকে পেশা হিসেবে স্থির রাখবেন তিনি এমনটা জানিয়েছেন।

সাগর হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রাইভেট কারে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন স্থানীয় এই ব্যক্তি। গত কয়েকদিন তার নিজ হাতে তৈরি ঝাল মুড়ি খেয়ে বেশ ভালো লেগেছে। এখনকার যুবকেরা শিক্ষিত হওয়ার পরেও কাঙ্খিত চাকরি না পেয়ে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে সব শিক্ষিত বেকারদের জন্য এই ঝাল মুড়িওয়ালা রোল মডেল হিসাবে কাজ করবে। নিজের হাতে কাজ করার মধ্যে অসম্মানের কিছু নেই, সৎ ভাবে রোজগার করাটাই মুখ্য বিষয় সেটাই দেখালেন জেমস।

আল আমিন নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, তিনি অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে ঝালমুড়ি প্রস্তুত করছেন। প্রথম দিন তার ঝাল মুড়ি খেয়ে ভালো লেগেছে বিধায় কয়েক দিন আসা হয়েছে। এভাবে পরিচ্ছন্নতার সাথে যদি তিনি তার ব্যবসাটা পরিচালনা করেন সেক্ষেত্রে অল্প সময়ে তার পরিচিতি ছড়িয়ে যাবে দেশ জুড়ে

আরিফুল ইসলাম জেমস বলেন, এর আগে আমি জেলার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি তবে সেখানে নিজের কোন স্বাধীনতা নেই। তাই চাকুরি ছেড়ে ঝাল মুড়ির ব্যবসা শুরু করেছি। এখানে যথেষ্ট ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে, সেখান থেকে লভ্যাংশ যা থাকছে পুরোটাই আমার। নিজের ঝালমুড়ি ব্যবসায় কাউকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগেছেনা। বাসায় শুয়ে থাকলে কেউ টাকা বয়ে দিয়ে আসে না। নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে সৎ আয়ের সুযোগ থাকার পরেও অনেকে কাজ করেনা। নিজের সকল লজ্জা দূর করে এই ঝাল মুড়ির ব্যবসায় নেমেছি।

আমরা যে ব্যবসা বা চাকরি করি না কেন আমরা বেতন কিংবা টাকা পাওয়ার জন্যই করে থাকি। টাকাটা যে কোনো কর্মের মাধ্যমে আসলেও বিষয়টা একই। দুই হাজার টাকার মতো খুব সামান্য বিনিয়োগ করে ঝালমুড়ির এই ব্যবসায়ী নেমেছি। গত কয়েকদিনে ব্যবসায় পরিচিতি পাওয়ার সাথে সাথে ক্রেতা বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন ঝালমুড়ি খেয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছেন তারা।

আরিফুল ইসলাম জেমস আরও বলেন, দেশে যারা শিক্ষিত বেকার রয়েছে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি’র একটু পরিবর্তন করে নিজের লজ্জা কমিয়ে যেকোনো ব্যবসা শুরু করলে নিশ্চিত তারা সফলতা লাভ করবে। বেকার অবস্থায় বসে না থেকে স্বল্প পরিসরে হলেও যেকোনো কাজ শুরু করে দেয়া উচিত। নিজের হাতে কোনো কাজ করা অসম্মানের নয়।

সাতক্ষীরা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কায়সারুজ্জামান হিমেল বলেন, আরিফুল ইসলাম জেমসের মত শিক্ষিত মানুষ যেটা করে দেখাচ্ছেন সেটা সমাজের অনেকেই পারছেন না। জেমসের কাছ থেকে যুবসমাজকে শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি না করে যার যার অবস্থান থেকে ছোট কাজ হলেও শুরু করতে হবে সেই শিক্ষা পাওয়া যায় জেমসের মনোবল ও কর্মকাণ্ড থেকে। জেমসের মার্জিত পোশাক পরে প্রাইভেটকার যোগে এসে ঝালমুড়ি বিক্রির বিষয়টি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।



সালাউদ্দিন/সাএ