বয়স্ক নাগরিকরা অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়ছেন, এবার প্রত্যেক বাড়িতে যাবে কলকাতা পুলিশ

শহরের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এবার নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা পুলিশ। এই শীতের মরশুমে পুজোর ঘরে পুজো করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া, খেয়াল না করার জেরে প্রদীপের শিখা শাড়িতে লেগে গিয়ে বিপত্তি ঘটার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সেটা একা থাকার সময়ই হোক বা গরমের খোঁজে পুজোর ঘরে ঢুকে পড়ার জেরে বহু বয়স্ক মানুষ আগুনে পুড়েছেন। এমনকী প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। এই আবহে এবার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এই ধরণের বয়স্ক মানুষদের জন্য একাধিক পরামর্শ–সহ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্কদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে। দু’‌দিন আগে বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের মা পুজো করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। তাঁর মা উত্তর কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিটের বাড়িতে পুজোর ঘরে ছিলেন। সেখানেই তাঁকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অতীনবাবুর দাবি, পুজোর ঘরে দেশলাই থেকে আগুন লেগে যায় তাঁর মায়ের গায়ে থাকা চাদর–শাড়িতে। আর তাতেই তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি অংশ পুড়েছে।

এদিকে পুলিশের কাছে নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত শহরে পুজোর ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচটি। প্রদীপ থেকে আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটছে। কালীঘাট, পর্ণশ্রী থেকে শুরু করে উত্তর কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিট—একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। লালবাজার সূত্রে খবর, সব ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধারা একা ছিলেন। আবার পুজো করতে গিয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে। ঠান্ডার কারণে দরজা–জানালা বন্ধ থাকায় বিপদ আরও বাড়ে। প্রতিবেশী বা বাড়ির সদস্যরা যতক্ষণে বুঝতে পারেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:‌ রামমন্দিরে যাওয়া হচ্ছে না বঙ্গ–বিজেপির বিধায়কদের, নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী

অন্যদিকে এই ঘটনাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বয়স্করা নিরাপদে নেই। এই কারণে এবার এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে কেউ একা থাকলে তাঁকে প্রদীপ না জ্বালানোর আবেদন করা হবে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়েও সচেতন করবে পুলিশ। তাছাড়া কোনও ঘটনা ঘটলে হাতের কাছে স্থানীয় থানা, নিকট আত্মীয়দের নম্বর রাখতে বলছে পুলিশ। বাড়ির বয়স্কদের পরিবর্তে অন্যেরা পুজোর প্রদীপ জ্বালালে অনেকটা বিপদ এড়ানো যায় বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। বয়স্কদের উপর বাড়ির অন্যদের নজর বাড়াতেও বলা হচ্ছে।