India-Maldives Core Group Meeting: মলদ্বীপ থেকে সরবে ভারতীয় সেনা, কোর গ্রুপের মিটিংয়ের পরে ঘোষণা ওই দেশের

রেজাউল এইচ লস্কর

ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে সব ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে শুক্রবার ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা হয়েছে।

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু ১৪ জানুয়ারি মালেতে দুই দেশের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কোর গ্রুপের প্রথম বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সে সময় মলদ্বীপ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, দুই পক্ষ দ্রুত সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে, তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে আরও আলোচনা করা হবে।

ভারত শুক্রবার ভারত মহাসাগরে তিনটি বিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক কথাবার্তার মাধ্যমে একটা কাজের পরিস্থিতি তৈরির ব্যাপারে রাজি হয়েছে।

মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুপক্ষই একটা বিষয়ে রাজি হয়েছে যে ভারত সরকার ১০ মার্চ ২০২৪ এর মধ্য়ে তিনটি বিমানক্ষেত্রের মধ্য়ে যেকোনও একটি থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। এরপর ১০ মের মধ্য়ে পরের দুটি বিমান ক্ষেত্র থেকেও সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। মলদ্বীপের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতেই বলা হচ্ছে মুইজ্জুর দাবি মেনে নিচ্ছে ভারত। ১৫ মার্চের মধ্য়ে মলদ্বীপ থেকে ভারত সমস্ত সেনা সরিয়ে নেবে। 

এদিকে সূত্রের খবর, মুইজ্জু সরকার নানাভাবে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িতে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে মলদ্বীপ সরকার। 

মলদ্বীপে বর্তমানে ভারতের ৭৫জন সেনা রয়েছেন। দুটি এএলএইচ হেলিকপ্টার রয়েছে। একটা ডোরনিয়ার বিমান রয়েছে। তবে এই সেনা সরানো নিয়ে একাধিক অপসন দিয়েছিল ভারত। বলা হয়েছিল সেনা সরিয়ে অসামরিক লোকজনকে রাখা যেতে পারে। এমনকী অবসরপ্রাপ্তদের রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। 

তবে মলদ্বীপের পক্ষ থেকে আগে জানানো হয়েছিল ভারতের সিভিলিয়ানরা বিমান চালানোর জন্য থাকতে পারেন। কিন্তু সেনা রাখা যাবে না। 

তবে আপাতত একটা কাজ চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে ফের মিটিংয়ে বসার ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। অন্যদিকে মলদ্বীপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা, সুরক্ষা সংক্রান্ত বোঝাপড়া, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যাপারে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা হবে। 

এদিকে গত মাসে দুবাইয়ে কপ-২৮ বৈঠকের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুইজুর মধ্যে বৈঠকের পরে কোর গ্রুপটি গঠন করা হয়েছিল। মুইজু তার দেশকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক যথেষ্ট চাপের মধ্যে পড়েছে।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্লাটফর্মকে কেন্দ্র করে প্রচার চালানো মুইজু মলদ্বীপে মোতায়েন ৭৫ জনেরও বেশি সেনা সদস্যকে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি বিমান পরিচালনার জন্য প্রত্যাহারের জন্য নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তুরস্কের কাছ থেকে গম কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি মলদ্বীপ সরকার মেডিকেল ইভাকুয়েশন পরিষেবার জন্য শ্রীলঙ্কার সহায়তা চেয়েছে। মুইজু ব্যক্তিগতভাবে চীনের কাছে মলদ্বীপে আরও পর্যটক পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন, যেখানে গত দুই বছর ধরে ভ্রমণকারীদের প্রধান উৎস দেশ ভারত।

যদিও ১৪ জানুয়ারি কোর গ্রুপের বৈঠকের পর মলদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে উভয় পক্ষ ভারতীয় সেনা কর্মীদের দ্রুত প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে মানবিক পরিষেবা সরবরাহকারী ভারতীয় বিমান চলাচল প্ল্যাটফর্মগুলির অব্যাহত পরিচালনা সক্ষম করার জন্য পারস্পরিক কার্যকর সমাধান” খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মলদ্বীপের পাবলিক পলিসি সেক্রেটারি আবদুল্লাহ নাজিম পরে ব্যাখ্যা করেন যে সরকারের অবস্থান হচ্ছে বিমান পরিচালনার জন্য অসামরিক কর্মীরা মলদ্বীপে থাকতে পারবে, কিন্তু সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চলে যেতে হবে।